দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ও জনরোষের মুখে পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার পদলেহী, সুবিধা ও উচ্ছিষ্ট ভোগী দোসররা গা-ঢাকা দিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে আছে। ওদের দেশ, রাষ্ট্র ও গণবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। খুনি স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসার মন্ত্রী, এমপি, নেতা-ক্যাডারদের দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার এবং জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের ক্ষত এখনও পর্যন্ত দগদগে। অথচ আজও দেশময় তলে তলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আওয়ামী স্বৈরাচারের অশুভ প্রেতাত্মা। হাসিনা ফ্যাসিবাদের নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অবিরাম চলছে কখনও নেপথ্যে, গোপনে, আড়ালে-আবডালে, কখনও ছদ্মবেশে, কখনওবা প্রকাশ্যে আসল চেহারায়। সুযোগ পেলেই ওরা বিষধর রাসেল’স ভাইপার কিংবা গোখরো সাপের মতোই মরণ ছোবল মারতে প্রস্তুত। ষড়যন্ত্রকারীরা ঠায় বসে নেই।
পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী চক্র কখনও নওফেল গংদের মতো উগ্রবাদী হিন্দুজোট ইসকনের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে, কখনও সংখ্যালঘু ‘ট্রাম্প কার্ড’ খেলার অপচেষ্টায়, আবার কখনও ট্রাম্পের ছবি প্রদর্শনের নামে ‘ট্রাম্প কার্ড’ নাটক সাজানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব তাবৎ অপতৎপরতার অসদুদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের শান্ত ও স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থির, অশান্ত করে তোলা। অন্তর্বর্তী সরকারের রুটিন কার্যক্রম ব্যাহত করে সরকারকে ‘উটকো ঝামেলা’র মাঝে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা। যাতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনমুখী ট্রেনের অভিযাত্রা পদে পদে ব্যাহত করা যায়। বেশকিছু নিত্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যেও কলকাঠি নাড়ছে আওয়ামী লীগের দোসর ও উচ্ছিষ্টভোগীদের অতি লোভী সিন্ডিকেট।
রফতানিমুখী গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরির পেছনেও ভারতের স্বার্থ রক্ষার কানেকশন ও মিশনে আওয়ামী কারিগররা সক্রিয়। ওরা চাইছে দেশের প্রধান রফতানিমুখী গার্মেন্টস খাতে ভারতীয়দের আয়ের পাল্লা ভারী হোক; বাংলাদেশের রফতানি ব্যাহত হোক! সচিবালয় থেকে মাঠ প্রশাসনে আমলা প্রশাসনযন্ত্রও এখন পর্যন্ত পতিত স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করা যায়নি। ছকে ছকে তারাও চাল চালছে ষড়যন্ত্রের দাবার ঘুঁটি। আমলাতন্ত্র প্রশাসন যন্ত্রকে ফ্যাসিবাদের কালো ছায়ামুক্ত করে দক্ষ, সৎ, ন্যায়-নীতি নিষ্ঠ পরিচ্ছন্ন ভাবাদর্শের কর্মকর্তাদের সময়োচিত মূল্যায়ন করে ঢেলে সাজানো জনগণের অন্যতম দাবি।
অন্যদিকে বিগত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতন ও ভারতে পলায়ন, তার দোসরদের পলায়ন, অনেকেই গর্তে লুকিয়ে থাকা এবং আবু সাঈদের মতো হাজারো ছাত্র-তরুণের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নতুন আরেকটি স্বাধীনতা অর্জন, স্বৈরশাসন থেকে বহুল আকাক্সিক্ষত মুক্তির স্বাদ আসে। সেই গৌরবময় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে খুনির দল আওয়ামী লীগ ও হাসিনাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো আওয়ামী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিবে দেশের মানুষ। কোনো ষড়যন্ত্রকারীকে তারা পরোয়া করে না। গতকাল সোমবারসহ দুইদিনে বারো আউলিয়ার পুন্যভূমি, বা’বুল ইসলাম (ইসলামের প্রবেশদ্বার), হাজোরা বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিনিধি জানতে পারেন, আওয়ামী স্বৈরাচারী গোষ্ঠির সবরকমের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সাধারণ জনগণ সবসময়ই সচেতন। তারা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন দেশের হালচাল পরিস্থিতি সম্পর্কে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি রয়েছে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইসলামপ্রিয় জাতীয়তাবাদী ছাত্র-জনতা সবধরনের আওয়ামী ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে প্রতি মুহূর্তেই প্রস্তুত। সর্বস্তরের জনগণই সদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। কেননা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, যুব ও তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে কৃষক-কিষাণী, পেশাজীবী, দিনমজুর, চাকরিজীবী, আলেম-ওলামা, সাধারণ ব্যবসায়ী, গৃহবধূ, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ আরো কখনোই সেই পতিত খুনি জালিম স্বৈরাচারী হাসিনা-যুগে তথা ‘আওয়ামী জাহেলিয়াত যুগে’ ফিরে যাবেন তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। সেই ১৭ বছরের চরম অমানুষিক দুঃশাসনের কালো অধ্যায় জনগণকে যেন প্রতিক্ষণে তেড়ে বেড়ায়।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বিশিষ্ট ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ গতকাল বলেন, এদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন যাতে আরো কখনোই ফিরে আসতে না পারে এ বিষয়ে দেশ-জাতি-জনগণ ঐক্যবদ্ধ। পতিত ও পলাতক হাসিনার আওয়ামী স্বৈরাচার ও তার দোসর, সুবিধাভোগীদের যে কোনো ষড়যন্ত্র চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজসহ জনগণই সদাসর্বদা অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরস্পরবিরোধী কোন রকমের বক্তব্য ও মন্তব্য দ্বারা জনগণের মাঝে যাতে কোনো বিভ্রান্তি কিংবা সংশয় তৈরি না হয় সেদিকে নেতৃবৃন্দকে সজাগ থাকতে হবে। কেননা বিভ্রান্তি অপপ্রচারের সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠি। এ ক্ষেত্রে ইসলামপ্রিয় ও জাতীয়তাবাদী চেতনার রাজনৈতিক দলগুলোর আরো বিচক্ষণ এবং গঠনমূলক ভূমিকা কাম্য।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠক, লেখক-কলামিস্ট বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান গতকাল বলেন, দেশ ও জাতির যে কোনো সময়ে-অসময়ে, যে কোনো প্রয়োজনে ডাক দিলেই হাজার হাজার মানুষ সমবেত হচ্ছে। সারা দেশে একই চিত্র। স্বৈরাচারী খুনি পতিত হাসিনা ও তার সুবিধাভোগী, তল্পিবাহক দোসরদের যে কোনো দেশবিরোধী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত ও রুখে দাঁড়াতে অতন্দ্র প্রহরীর মতোই তারা প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও বৈঠক করা প্রয়োজন। এর ফলে দেশবাসী আরো আশাবাদী ও উদ্দীপ্ত হবে।
এদিকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে শহর-বন্দর-নগর-গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ময়দানে নির্বাচনমুখী রাজনীতির আগাম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফ থেকে উত্তরে মীরসরাই পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় সচেতন সাধারণ জনগণ আগামী দিনের নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশের অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের সবখানে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলসমূহের মহানগর, জেলা, ওয়ার্ড, উপজেলা বা থানা পর্যায়ের পার্টি অফিসগুলো তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকদের ভিড়ে ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যকার সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঝেমধ্যে নিজের গোছালো পরিকল্পনা অনুযায়ী তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সাথেও টেলিফোনে কথাবার্তা বলছেন, কুশলাদি অবহিত হচ্ছেন। এর ফলে তৃণমূণের নেতারা এখন আর নিজেদের ‘অবহেলিত-বঞ্চিত’ বলে ভাবছেন না। বরং দলের কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা বা থানা পর্যায়ে তৃণমূল ক্রমেই উজ্জীবিত এবং আত্মবিশ^াসে বলীয়ান হয়ে উঠছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।