জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকা টিকা নিয়ে গুজব নয়


ভোলায় হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় টিকার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে দেওয়া এ টিকার বিষয়ে গুজব না ছড়ানোর জন্য বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর। গতকাল রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এইচপিভি টিকা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। সম্প্রতি শুরু হয়েছে সরকারের জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি। তবে এই কর্মসূচিকে ঘিরে ভোলায় টিকা দেওয়ার সময় আতঙ্কে কিছু শিক্ষার্থীর জ্ঞান হারানোকে কেন্দ্র করে সমাজে ছড়িয়েছে নানা গুজব। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ইপিআই এবার সাত বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জনকে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মাঝে স্কুলে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯১৮ জন নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে, আর টিকা নিয়েছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ১৮ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মাঝে ২৭১ জনের সাধারণ কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা পয়েন্ট ০ দশমিক ১৪ শতাংশ। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যা একেবারেই নগণ্য। শতকরা চার থেকে পাঁচজন আক্রান্ত হলে তখন সেটাকে সরাসরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। ভোলার ঘটনা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সেখানে দুজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়। তারা টিকা দেওয়ার পর কিছুটা অসুস্থতা অনুভব করলে তাদের শুইয়ে দেওয়া হয় একটি কক্ষে। এই অবস্থা দেখে সেখানকার অন্য শিক্ষার্থীরাও জ্ঞান হারায়। এদের মাঝে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়নি। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারণত টিকা দিলে জ্বর, ব্যথা এসব উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ না দেখা দিলে শরীরে টিকা কার্যকর হয়েছে কি না সেটাও বোঝা যায় না বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অত্যন্ত নিরাপদ এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। সারভাইকাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য এইসপিভি টিকা অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ। গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ভ্যাকসিন সেফটি তথ্য বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছেন যে, এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি ৯টি আর্টিকেল পেপার, রোগ নিরীক্ষণ কর্মসূচির রিপোর্ট এবং রোগতাত্ত্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে টিকার কার্যকারিতা এবং গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে গবেষণা করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এইচপিভি টিকার সঙ্গে গুরুতর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক নেই। গর্ভাবস্থায় এইসপিভি টিকা প্রদানের সঙ্গে জন্মগত শিশুর ওপরে কোনো বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি।