জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইবে রাশিয়া


রুশ জাহাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইতে পারেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ। আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে তিনি বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ অনুরোধ রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে রওনা হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে জাহাজটি তীরে ভিড়তে পারেনি। পরে বাংলাদেশ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে-যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৬৯টি জাহাজও বাংলাদেশে আসতে পারবে না। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে আসছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসবেন তিনি। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন লাভরভ। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। ওই সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসছেন না। লাভরভ তার প্রতিনিধিত্ব করবেন। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, লাভরভ ঢাকা সফরের সময় দুদেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। সার্গেই লাভরভের গত মার্চে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তখন শিডিউল মেলাতে না পারায় আসতে পারেননি। তখনই ওয়াদা করেছিলেন সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। লাভরভ ব্যস্ত মানুষ তাই তিনি জানিয়েছেন, ভারতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের সময়ে তিনি আসবেন। ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশ যাতে রাশিয়ার পক্ষে থাকে সে বিষয়েও তিনি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকটা ভারত ও চীনের মতো অবস্থান বাংলাদেশের কাছেও প্রত্যাশা করে রাশিয়া। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একবার ভোটাভুটিতে চীন ও ভারত ভোটদানে বিরত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া মনে করে-রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করাতে সহায়তা করছে মস্কো। প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অন্যতম নিয়ামক। ফলে মস্কোর প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার পক্ষে থাকবে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনে মার্কিন চাপ উপেক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও লাভরভ করতে পারেন। বিনিময়ে তিনি অবশ্যই বাংলাদেশকে তাদের কক্ষপথে চাইবেন। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ডলারে পরিশোধ করতে না পারায় রুবলে পরিশোধের অনুরোধ করেছিল রাশিয়া। এরপর বাংলাদেশ রাজি হয়-চীনের মুদ্রা ইউয়ানে কিস্তি পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত ইউয়ানে কিস্তি পরিশোধের টাকা দেওয়া শুরু করেনি বাংলাদেশ। ফলে আলোচনায় এ প্রসঙ্গও উঠতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ায় বিভিন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানায় মস্কো। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের মন্ত্রীরা এসব সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ তাতারস্তানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি যোগ দেননি। পররাষ্ট্র সচিব ও ইআরডি সচিবকেও পৃথক সম্মেলনে দাওয়াত দিয়েছিল রাশিয়া। তারা কোভিড মহামারির কারণে যাননি। এ ব্যাপারে সার্গেই লাভরভ আস্থা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর থেকে সার্গেই লাভরভ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। ওই সময় থেকে তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে রাশিয়া। ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাস নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক পর্যায়ে এ সফর নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়া এককেন্দ্রিক বিশ্বের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছে। রাশিয়া তাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে পশ্চিমা নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাচ্যের দিকে সম্পর্ক উন্নয়নে উৎসাহিত করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব যখন বাংলাদেশকে নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে; লাভরভ সম্ভবত এ সময়কে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে বোঝানোর জন্য।