ঝড় আসলে বুকে পানি থাকে না খুপড়ি ঘরে বসবাস কারিদের।


ঝড় আসলে বুকে পানি থাকেনা। মরনটারে হাতে লইয়া থাকি। কি করমু বাচঁতেতো হইবো। এদেশে আসছি কাজের জন্য কাজ না করলে দেশে গিয়া খামু কি? এ বছর আগে আগেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হইয়া গেলো মনে হয় বেশি দিন আর থাকতে পারমু না দেশে ফিরা যাইতে হইবো। এ বছর শীত যেমন কস্ট দিছে এখোন আবার ঝড় শুরু করছে। আমাগো গরীব মানুষের কোন শান্তি নাই। কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা হতে মুন্সীগঞ্জে আলু উৎপাদন কাজ করতে আসা পারভীন বেগম।মুন্সীগঞ্জে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা পারের কান্দাপাড়া গ্রামে খুপড়ি ঘর তুলে এ বসবাস করছেন পারভীন বেগম। এ মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের পদ্মার চরসহ মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভিটা ও বাড়িতে খুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করে হাজারো পরিবার। পদ্মার চর ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেলা জুড়ে বিভিন্ন পরিত্যাক্ত মাঠ, ভিটায় এ মৌসুমে দেখা মিলে এ সমস্ত খুপড়ি ঘরের। খুপড়ি ঘরে বসবাসকারীরা মূলত মুন্সীগঞ্জে যখন আমন ধান কাটা শুরু হয় নভেম্বর মাসের দিকে এদেশে আসেন। প্রথমে তারা ধান কাটায় অংশ গ্রহন করেন। পরে ধানের জমির খেড় পরিস্কার করেন। এরপর শুরু হয় আলু রোপন কাজ রোপন শেষে আগাছা পরিস্কার জমিতে ঔষধ স্প্রে করেন পরে মার্চ মাসের শুরু হতে অংশ নেন আলু উত্তোলন কাজে যা চলে এপ্রিল মাস পর্যন্ত । আলু উঠানের পর জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের কাজটিও করেন তারা।মূলত মুন্সীগঞ্জের আলু উৎপাদনের কাজটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের শ্রমিকদের হাত ধরেই হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আসেন নেত্রকোনা জেলা হতে। জামলাপুল, ময়মনসিংহ, রংপুর, গাইবান্ধা, নাটোর,পঞ্চগর জেলার প্রচুর শ্রমিকের আগমন ঘটে এ মৌসুমে। নভেম্বর মাসে মুন্সীগঞ্জে পরিবার পরিজন নিয়ে আসার পরে অনেকে খুপড়ি ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। কেউবা আবার যে বাসায় কাজ করেন সে বাসায় আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে অনেকে কিছুদিন কাজ করে যার যার দেশে ফিরে যান কেউবা থেকে যান ৬ মাসের অধিক সময়। মুন্সীগঞ্জের চাষি জমিগুলো সাধারণত প্রায় ৬ মাস পানির তলে থাকায় ওই ৬ মাস এদেশে কোন কাজ থাকেনা তাই শ্রমিকের প্রয়োজন হয়না। বাকি যে ৬ মাস শুক্ন মৌসুমে সেই সময়টাতে উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা এদেশে কাজ করে থাকেন।সরেজমিনে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট খুপড়ি ঘরে বসবাস করছে শিশু বৃদ্ধা নিয়ে ৫/৭ জনের পরিবার। অধিকাংশ খুপড়ি ঘরের চালের উপরে খড়। কোনটায় বাশের বেড়া কোনটায় বা খড়ের নিচে মাটি। আস্থায়ী এ ঘরগুলোর আয়াতন খুবই ছোট। যেগুলোর ভিতরে পূর্ন বয়স্ক মানুষের সোজ হয়ে দাড়ানোর সুযোগ নেই। অধিকাংশ ঘরের উচ্চতা ৩/ ৪ ফিট। ছোট আয়াতনের এই ঘরগুলোর মধ্যে পা টান করে শোয়ার সুযোগ খুব কমই মিলে বসবাস কারীদের। তারপরে পরিত্যাক্ত ভিটায় খোলা ময়দানের পাশে এ সমস্ত খুপড়ি ঘর তোলায় একদিকে যেমন শীত মৌসুমে শীতের দাপুটে এ সমস্ত মানুষগুলোকে পিড়া পোহাতে হয় অন্যদিকে এ মৌসুমে ঝড় বৃষ্টিতেও নাকাল হয়ে পরেছে এসব খুপড়ি ঘরে বসবাসকারীরা। এরা সাধারনত খুপড়ি ঘরের পাশে উন্মুক্ত আকাশের নিচে রান্না করে থাকে। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় তাদের চুলাগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে থাকায় রান্না করতেও পরতে হচ্ছে বিরম্বনায়। এ সমস্ত পরিবারের শিশুরা ৬ মাস নিজ দেশে এবং ৬ মাস মুন্সীগঞ্জে থাকায় তাদের লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনা।কান্দার পাড়া এলাকায় খুপুড়ি ঘরে বসবাস করা নেত্রকোনা গ্রামের সখিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। আমার দুইটা মেয়ে। দেশে থাকার পড়ার ব্যবস্থা নাই । তাই আমার দেশের অন্যান্য মানুষের সাথে ১০ থেকে ১২ বছর যাবত এখানে আসি। এখানে এসে ঘর তুলে ছয় মাস থাকি ছয় মাস পরে আবার দেশে চলে যাই। এখন ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম চলতেছে। ঝড় আসলে আমাদের ঘরে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। বৃষ্টিতে চুলা ভিজে যায় রান্নাবান্না করতে পারি না । জুলহাস বলেন, আলু তোলার জন্য এখানে এসেছিলাম । এখন আলুর তোলার কাজ মুটামুটি শেষ। পেঁয়াজ মরিচ তোলার কাজ করতেছি। সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে ৩০০ টাকা পাই।হোসনে আরা বলেন, প্রতি বছর এদেশে আসি। যে যায়গাটা দেখতাছেন এখানে ঘর তোলার জন্য জাগার মালিককে ১২০০ টাকা মাটি ভাড়া ৬ মাসের জন্য দিতে হইছে। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে এক মেয়েকে দেশে রেখে এসেছি। ১ মেয়ে ২ ছেলে নিয়ে এই ঘরে থাকি । ছয় মাস হয় আসছি। এ বছর আগে আগে ঝড় শুরু হইছে। ঝড় আসলে কলিজায় পানি থাকে না তারপরও বাচ্চা লইয়া থাকি কি করবো এ দেশে কাজ করতে আসছি যাওয়ার তো অন্য জায়গা নাই তাই থাকি নেত্রকোনার রমজান বলেন ছয় মাস আগে এখানে এসেছি। শীত খুব কষ্ট কইরা ছিলাম। এখোন আবার ঝড় শুরু হইছে। ছোট ঘরে পরিবারসহ ৪-৫ জন থাকি। অনেক কষ্ট হয় ।