টিআইবিকে আ.লীগের বিষোদগার, বিএনপির সাধুবাদ


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপাক্ষিক ও পাতানো বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলেও বিএনপি নেতারা বলছেন, টিআইবির বক্তব্যে ‘জনমতের প্রতিফলন’ ঘটেছে। টিআইবির প্রতিবেদন নিয়ে গত দুদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে টিআইবিকে ধুয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের প্রভাবশালী অন্তত তিনি নেতা। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব টিআইবিকে সমর্থন করেছেন। টিআইবির বক্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত। অপরদিকে টিআইবির প্রতিবেদনকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি বুধবার রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছে, এই নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ হয়নি বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি বলছে। এই রিপোর্টকে একপেশে, সরকারবিরোধী, অযৌক্তিক ও গোঁজামিলে ভরা বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষায় টিআইবিও কথা বলে। বিএনপির ওকালতি করতেই এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। টিআইবির বক্তব্যের সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, টিআইবি বিএনপির দালালি করছে। বিএনপির ভাষার সঙ্গে তাদের ভাষা মিলে যাচ্ছে। তারা কখনোই আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো কথা বলেনি। তারা একটি পক্ষের হয়ে ওকালতি করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সবাই তো বলেছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই। কাজেই টিআইবি যা বলেছে, এটা জনমতের প্রতিফলন। সরকারের মন্ত্রিদের সমালোচনা নিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা (বিএনপি) যা বলেছি সেটাও জনমতের প্রতিফলন। ফলে যদি আমাদের কথা মিলে যায় সেটা একজন আরেকজনকে পছন্দ করার জন্য না, এটা সত্য বলার জন্য। সরকারের মন্তব্যের সমালোচনা এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অভিমতকে সাধুবাদ জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ন্যায্য কথা এবং বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষে যে বলবে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা যা বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ, জনগণ যা বলে সেটা ‍গুরুত্বপূর্ণ। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, টিআইবির পর্যবেক্ষণে পুরো চিত্র আসেনি। এ রকম ভোটারবিহীন এবং অনিয়ম ও ডাকাতির নির্বাচন দেশের জনগণের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক বিশ্বও কখনো দেখেনি। সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ক্ষমতায় থাকার। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির কথাই ‘পরিশীলিতভাবে পরিবেশন করেছে টিআইবি’। তিনি বলেন, টিআইবি সব সময় গবেষণালব্ধ রিপোর্ট প্রকাশ করে। প্রকৃত পক্ষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টিআইবি গবেষণা না করেই হালকা কিছু বিষয়, অর্থাৎ পত্রিকার রিপোর্ট এবং তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতেই তারা প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটাও আমার সে রকম মনে হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান শুক্রবার টিআইবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, শুধু টিআইবি কেন, কে বলে নাই সেটা বলেন? কে বিএনপির কথাকে রিপিট করে প্রমাণ করে নাই যে, বিএনপি বিগত ১৫ বছর ধরে এই সরকারের স্বৈরাচারি প্রকৃতি এবং একদলীয় শাসন সম্বন্ধে যে কথা বলেছে… এটা দেশে-বিদেশে, কোন প্রতিষ্ঠান, কোন সরকার বলে নাই যে, বিএনপি সত্য কথা বলে নাই। অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, নির্বাচন নিয়ে টিআইবি যে গবেষণা করেছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না। এ রিপোর্ট গোঁজামিলে ভরা ও বিভ্রান্তিকর। টিআইবি অযৌক্তিক কথা বলেছে। তিনি বলেন, যারা এই গবেষণা করেছেন, তাদের গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের কোনো গবেষণা নেই। টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অসত্য তথ্য দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিজ্ঞানসম্মত, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ না করে তার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ নির্বাচন যেভাবে দেখেছে, উপলব্ধি করেছে টিআইবির রিপোর্ট তারই প্রতিফলন। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী ৬৩টি রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের অধিকাংশ বরেণ্য ব্যক্তি শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। এটা যে একতরফা নির্বাচন হচ্ছে এজন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট বর্জনের কর্মসূচি সঠিক ছিল। জনগণ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ভোট বর্জন করেছে। জনগণ যা ভেবেছিল ভোটে জালিয়াতে হতে পারে তাই-ই হয়েছে। টিআইবির রিপোর্টে সত্যটাই এসেছে। রিজভী আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে কি হয়েছে জনগণ সব দেখেছে, সব জানে। টিআইবির রিপোর্টে সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে। সরকারের সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের ঘন অন্ধকার ভেদ করে টিআইবি রিপোর্টে পাতানো ভোট ও ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ পেয়েছে। তাই সরকারের মন্ত্রীরা মুখ লুকাতে পারছেন না। এজন্য আর্তচিৎকার করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করলেও কোনো লাভ নেই।