ট্রাম্পের ‘মিথ্যার’ তোড়ে অসহায় বাইডেন


মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে ‘মিথ্যাচার’ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতি, ভেটেরান্সদের যত্ন, অপরাধ এবং এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ইউএস ক্যাপিটলে হামলার বিষয়েও একের পর এক মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প। যার ফলে প্রথমেই কিছুটা হোঁচট খেয়েছেন জো বাইডেন। খবর হাফ পোস্টের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ বিতর্ক বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে শুরু হয়। বিতর্কে ট্রাম্প দাবি করেন, তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইতিহাসের সেরা অর্থনীতি’ ছিল। তার সময় অর্থনীতি মূলত তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার মতোই ছিল। সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ভেটেরান্স চয়েস অ্যাক্ট পাস করেছেন। বাস্তবে, সেই ব্যবস্থাও ওবামার অধীনে পাস হয়েছিল। ট্রাম্প দাবি করেন, বর্তমানে অপরাধ আকাশছোঁয়া। প্রকৃতপক্ষে, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের শাসনামলের শেষ বছরে অপরাধ শীর্ষে পৌঁছেছিল এবং বাইডেনের অধীনে প্রতি বছরই হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ইউএস ক্যাপিটলে হামলার ক্ষেত্রে তিনি কোনো ভুল করেননি। বরং সহিংসতা বন্ধ না করার জন্য প্রাক্তন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে দায়ী করেন। ট্রাম্প বলেন, এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল তা আমার কর্মের কারণে নয় বরং রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে। এসময় তিনি দাবি করেন, বাইডেন চীন থেকে অর্থ নিচ্ছেন। বাস্তবে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হোয়াইট হাউসের পাঁচটি ব্লকের হোটেলের মাধ্যমে চীন থেকে ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি পেয়েছিলেন। সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টের মধ্যকার এ বিতর্কে সিএনএনের সঞ্চালক- ডানা বাশ এবং জ্যাক ট্যাপার ট্রাম্পের কথাগুলোর সত্যতা যাচাই করেননি এবং বাইডেনকেও ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে অক্ষম বলে মনে হয়েছিল। বিতর্কের একপর্যায়ে জনসমক্ষে নারীকে শ্লীলতাহানি, পর্ন তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক এবং বিভিন্ন আদালতের মামলা নিয়ে প্রশ্ন করেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ড কেইটি কে বলেছেন, এবারের বিতর্কের ফরম্যাট ছিল আমেরিকানদের জন্য তুলনামূলক ভালো। তবে সঞ্চালকরা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি এবং এটা ছিল জো বাইডেনের জন্য একটি খারাপ রাত। তার অনেক জবাবই পরিষ্কার ছিল না। তাকে বয়স্ক মনে হচ্ছিল। তবে বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপ তার জন্য কিছুটা ভালো ছিল এবং তিনি কিছুটা শক্তি পেয়েছিলেন। তবে এটা হতে হতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। তবে বাইডেনের কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট সর্দিতে ভুগছিলেন। তিনি কিছুটা অসুস্থ। বাইডেন এবং ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রচারাভিযানের সময় দুবার বিতর্ক করেছিলেন, যখন ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং বাইডেন তার পুনর্নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের যারা মনোযোগ দিয়ে বিতর্ক দেখেছেন তারা অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান স্টেফাইন মারফি বলেছেন কিছু মূহুর্ত ছিল যেখানে বাইডেন তার বয়স তুলে ধরেছেন। তাকে বোঝাটা কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু অন্যদিকে তার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু মন্তব্য করেছেন যা ‘সত্যি নয়’ এবং এগুলো সত্যতা যাচাই করা উচিত। তিনি বলেন, তার উদ্বেগের জায়গা হলো নির্বাচনের ফল গ্রহণ করবেন কি-না তা বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনীহা দেখিয়েছেন। সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান রোডনি ডেভিস বলেছেন, বিতর্কটি ছিল ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিষ্কার জয়’। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকাজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের জন্য দুঃখজনক যে, বিতর্কের ধরণটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে।’ বিবিসির ম্যাডেলাইন হ্যালপার্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর কোরউইন স্মিডট বলেছেন, বাইডেন তার অনেক দুর্বলতা দেখিয়েছেন এবং খুব বেশি শক্তির জায়গা দেখাননি। ভিজুয়াল, কণ্ঠ ও জবাব দেওয়ার গতির কারণে তাকে অনুসরণ করাটা কঠিন ছিল। তিনি বলেন, ‘অনেক তথ্যভিত্তিক জবাব ও পয়েন্ট প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন। কিন্তু বলার ধরনের কারণে সেগুলো দ্রুত হারিয়ে গেছে।’ ট্রাম্পের পারফরমেন্স থেকেও অনেকে বেশি শক্তির জায়গা পাওয়া যায়নি এবং তিনিও কিছু দুর্বলতার প্রদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেছেন। অপর দিকে বাইডেন কথা বলেছেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড। যদিও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই প্রার্থীরই সমান সুযোগ ছিল। বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। তবে বাইডেনের ভূমিকায় হতাশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট–সমর্থক। তাঁরা বলছেন, বিতর্কে ট্রাম্পের মিথ্যা কথাগুলোর পাল্টা জবাব দিতে পারেননি বাইডেন। এমনকি নিজের লক্ষ্য কী, তিনি দেশের জন্য কী কাজ করেছেন, তা সুস্পষ্টভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারেননি বর্তমান এই প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটদের মূল উদ্বেগের জায়গাটি হলো, অন্যান্য সময়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প। এমনকি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও স্বীকার করেছেন, বাইডেন ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ‘বাইডেন পরে দৃঢ়ভাবেই বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন।’