ডলারের দামে বিশৃঙ্খলা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ডলারের তীব্র সংকটের মধ্যে বাজারে এর দাম নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ডলারের দামের ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাফেদা ও এবিবির ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর তারা এখন বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হওয়ার পর বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। প্রণোদনার নামে রেমিট্যান্সের ডলার ১২১ থেকে ১২৩ টাকা দরেও কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। বেশির ভাগই কিনছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা করে। এতে ডলারে কেনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও প্রিমিয়াম এবং নানা ফির নামে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে। আমদানির ডলার ১১১ টাকা করে বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৭ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। এতে রপ্তানিকারকরাও আপত্তি করেছেন। তারা ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে এখন ডলার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের লাইসেন্সধারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। তারা বলেছে, রেমিট্যান্সের ডলারের ক্ষেত্রে আগের দামই অর্থাৎ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা বহাল থাকবে। তবে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ এর দাম কোনো ক্রমেই ১১৫ টাকার বেশি হবে না। এর চেয়ে বেশি দামে কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কিনলে এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেই বহন করতে হবে। তবে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো ক্রমেই বেশি দাম নেওয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেল ডলারের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা শিথিল হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়, বাড়তি দামে ডলার কেনার জন্য। এ মাসের শেষদিকে এসে কিছু ব্যাংক বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনা শুরু করে। ওই সময়ে ১১০ টাকা করে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নির্ধারিত থাকলেও তারা ১২১ থেকে ১২২ টাকা দরেও কিনেছে। একে বৈধ করার জন্য বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রেমিট্যান্সের ডলারে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। এর সঙ্গে সরকারি খাতের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ। দুটি মিলে প্রণোদনা দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। এতে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম দাঁড়ায় প্রায় ১১৬ টাকা। কিন্তু এর আগে থেকেই কিছু ব্যাংক ১২১ থেকে ১২২ টাকা দরেও রেমিট্যান্স কিনছে।
১ নভেম্বর থেকে ডলারের দাম বাড়িয়ে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই বৈঠকে রেমিট্যান্সের প্রণোদনার বিপরীতে সীমা তুলে দেওয়া হয়। বলা হয়, ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে যে কোনো অঙ্কের প্রণোদনা দিতে পারবে। ওই প্রণোদনার অর্থ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটাতে হবে। এর দায় গ্রাহকের ওপর চাপানো যাবে না। অর্থাৎ বেশি দামে ডলার কিনলেও বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। এ সুযোগে কিছু দুর্বল ব্যাংক বাড়তি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে ডলারের দাম বাড়িয়ে ১২৩ টাকায়ও রেমিট্যান্স কিনে। অর্থাৎ তারা প্রতি ডলারে সাড়ে ১২টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু ওইসব ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা করে। এতে প্রতি ডলারে লোকসান হচ্ছে সাড়ে ১২ টাকা। এই লোকসান সমন্বয় করতে হবে নিজস্ব অর্থ থেকে। এতে ব্যাংকগুলোর লোকসান বেড়ে যাবে। এ কারণে তারা ডলারের দাম বাড়াতে বাফেদাকে চাপ দিচ্ছে।
বাফেদা ও এবিবির বুধবারের বৈঠকে বলা হয়, রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি বাড়ানো যাবে না। কারণ, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। এ কারণে তারা রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ টাকা প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। অর্থাৎ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারিত দামের সঙ্গে সাড়ে ৪ টাকা যোগ করে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা করে রেমিট্যান্স কেনা যাবে। এর বেশি দামে কেনা যাবে না। তবে আমদানি, রপ্তানি ও অন্যান্য খাতে ডলার বিক্রি করতে হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা দামে। রপ্তানি আয়ের ডলার কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন, একই ডলার ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে কিনছে ১২২ থেকে ১২৬ টাকা দামে। ওই ডলারই রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কিনছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এতে প্রতি ডলারে তারা ঠকছে সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৫ টাকা। এ কারণে তারা রপ্তানি আয়ের ডলারের দাম সমন্বয়ের দাবি তুলেছেন।
এদিকে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার কিনছে ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে। ওইসব ডলার তারা এক টাকা মুনাফায় ১২৩ থেকে ১২৪ টাকার কম দামে বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এত দামে অনেক ব্যাংক ডলার কিনতে চাচ্ছে না। ফলে অনেক ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। তবে কিছু ব্যাংক বাড়তি দামে ডলার কিনছে। এদিকে চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার না কেনায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের কাছে মোটা অঙ্কের ডলার আটকে রয়েছে।
এদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরও একদফা বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় উঠেছিল। বুধবার তা আরও বেড়ে ১২৪ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে। দিনের শেষদিকে তা কোথাও কোথাও আরও বেড়ে ১২৫ টাকায়ও বিক্রি হয়। ব্যাংকগুলোয় রেমিট্যান্সের ডলার ১২২ থেকে ১২৩ টাকা ওঠায় কার্ব মার্কেটে ডলারের দামও বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম বাড়ছে। বুধবার তা সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা করে বিক্রি হয়। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকেই ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।