ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিশিষ্টজন বলেছেন, এ আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি। এই আইনের কারণে সংখ্যালঘু ও সংবাদকর্মীরা সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় পড়েছেন। এটি নিবর্তনমূলক, সংবিধান পরিপন্থি ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী। সংস্কার করলেও এটিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। এটি বাতিল করতে হবে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরা হয়। সংখ্যালঘু ও সংবাদকর্মী নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের বিষয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন সমন্বয় সেল ও উদ্বিগ্ন নাগরিকরা। সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, এ আইনের অধীনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সম্পাদক, সংবাদকর্মী ও অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন নিজেরা করির সমন্বয়কারী ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) চেয়ারপারসন খুশী কবির। বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তবারক হোসেইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তার আইন মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করেছে। এটিকে ডিজিটাল অনিরাপত্তামূলক আইন বলা যায়। এই অনিরাপত্তা প্রত্যেক নাগরিকের জন্যই। যে কোনো মাপকাঠিতে এই আইন অগ্রহণযোগ্য। যেভাবেই সংস্কার বা ঢেলে সাজানো হোক না কেন, এটিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। এটি বাতিল করা হোক। কাজল দেবনাথ বলেন, এ আইন সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য বিশেষ আইন। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সংশোধন না হচ্ছে বা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা না নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ এ আইন স্থগিত রাখতে হবে। আইনজীবী তবারক হোসেইন বলেন, এ আইন সাংবাদিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এ আইন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সংখ্যালঘুদের হয়রানি ও যাঁরা অনলাইনে সমালোচনা করেন, তাঁদের কণ্ঠ রোধ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক খুশী কবির বলেন, গণতন্ত্র চর্চায় আঘাত হানছে এ আইন। লিখিত বক্তব্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে যাঁদের নিপীড়ন করা হয়েছে বা যাঁরা জেলে আছেন, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, নওগাঁয় ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র্যাাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করা।