ডিসেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি


দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করা রাজপথের বিরোধী দল ঘুরে দাঁড়াতে চায়। দল পুনর্গঠন করে রাজপথে সক্রিয় হতে চায়। এ কারণে বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও হালনাগাদ করা হবে। এসব কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চায় বিএনপি। দ্বাদশ নির্বাচনের মাস ছয়েক আগ থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাস খানেক আগ থেকে নেতাদের মাঠে পাওয়া যায়নি। এ সময় দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। বহু নেতাকর্মী এখনও কারাগারে। এমতাবস্থায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরেছে। তৃণমূল নেতারা জানান, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এবারে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসেনি। উলটো নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়ন বেড়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ পদধারী নেতা নিজেদের সুরিক্ষত রাখতে আন্দোলন ও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। এমন অবস্থায় আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে লক্ষ্যেই নেতারা কাজ করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের যে চাওয়া, সেটা যৌক্তিক। দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুনর্গঠন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ভোটের মাধ্যমে কমিটি নির্বাচিত করা গেলে দলের জন্য ভালো। এতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা মূল্যায়িত হবেন। হুট করে একটা কাগজে করে কমিটি দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করা সম্ভব নয়। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী একদফার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। নির্বাচনের আগে যখন একদফার আন্দোলন তুঙ্গে ছিল, তখন দায়িত্বশীল অনেক নেতাকে মাঠে পাওয়া যায়নি। যার কারণে আন্দোলনে সফলতা আসেনি। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এছাড়া যেসব নেতাকর্মী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তারাও এখন ক্লান্ত। মামলা, হামলায় র্জজরিত। এখনো অনেকে কারাগারে। এখন সবার আগে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়তে হবে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে আলোচনা করেছেন নেতারা। বেশির ভাগ নেতাই দ্বন্দ্ব-বিভক্তি নিরসন ও পুনর্গঠনে মতামত জানিয়েছেন। সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠনের পর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করা হতে পারে। কারণ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে এতদিন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করা যায়নি। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, যারা দলের পুনর্গঠনের দায়িত্বে ছিলেন, তারা সাংগঠনিক জেলায় সেভাবে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের দিতে পারেননি। এর বড় প্রমাণ আন্দোলনে জেলার শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগকে মাঠে পাওয়া যায়নি। এখনও পুনর্গঠনে যদি তাদেরই আবার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে কোনো লাভ হবে না। নেতারা বলছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে কমিটি করলে, দলের ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হতে পারেন। এছাড়া একদফার আন্দোলনে যারা মাঠে থেকে কর্মসূচি পালন করেছেন তাদেরকে অনেকটা কোণঠাসা করে রাখছেন পদধারী নেতারা। অন্যদিকে যারা পালাতক ছিলেন কিংবা আন্দোলনে অংশ নেননি তারাই আবার সামনে এসে কর্তৃত্ব দেখাচ্ছেন। এতে দলের একনিষ্ঠ ও সক্রিয় নেতারা অভিমানে নিষ্ক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, একদফার আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা না আসার পেছনে সরকারের ব্যাপক দমনপীড়নের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও অন্যতম কারণ। এছাড়া বিএনপিসহ সমমনা ৬৩টি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে সরকারও গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে দলের দুর্বলতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দ্রুত দলের পুনর্গঠনে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির ফাঁকা পদ পূরণের পাশাপাশি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনে বিএনপিকে উদ্যোগী হতে হবে। কাউন্সিল ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৃণমূলের নেতৃত্বকে সুসংগঠিত করতে হবে। একই সঙ্গে দলের দুঃসময়ে যারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন সেসব সুবিধাবাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি করেছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা। জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে দলকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে আনতে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা নানা কারণে থমকে যায়। এমনকি অধিকাংশ সংগঠন ও জেলা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। যেসব কমিটির মেয়াদ রয়েছে সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে সফল হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে ৬টি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে মাত্র কয়েকটি। বাকিগুলো আহ্বায়ক কমিটির ওপরই নির্ভর। এই আহ্বায়ক কমিটি নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। তাদের মেয়াদ তিন অথবা ছয় মাস দেওয়া হলেও নানা অজুহাতে বছরের পর বছর পার করছে। এতে দলের মধ্যে বাড়ছে বিরোধ-বিভক্তি। শিথিল হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের চাওয়া আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি। আমাদের শক্তির মূল উৎস সাধারণ জনগণের সমর্থন। আর সেটি আদায় করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ কারণে তাদের ভাবনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এখন দল অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। কাজেই সামনে আন্দোলনসহ যা যা করা উচিত তা সবই করা হবে।’