‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পার্টির জন্য গলার কাঁটা’


তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে জাতীয় পার্টির জন্য গলার কাঁটা বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা। শনিবার বিকালে সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও চর কামালদী বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত নোয়াগাঁও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। লিয়াকত হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের কাছে। তিনি যখন শপথ নিলেন তখন বলেছিলেন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ সুবিধা দেবেন। উলটো তিনি শপথ নেওয়ার কিছু দিন পরে আমাদের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরে সব দলের প্রধানরা রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পান কিন্তু পল্লীবন্ধু এরশাদকে সেই ভাষণ থেকে বিভিন্ন ছল-চাতুরি করে শাহাবুদ্দিন সরকার ষড়যন্ত্র করে দূরে রাখেন। তার কিছুদিন পর আজকের বিরোদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও শিশুপুত্র শাদ এরশাদকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠান। সেই সময় বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের রোষানল থেকে কেউ রেহাই পায়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আইনজীবীরা পল্লীবন্ধু এরশাদের পক্ষে কোর্টে দাঁড়িয়েও জামিন করাতে পারেনি। বরং আমাদের জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী, সিনিয়র নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করা হয়। নির্বাচনকালীন জাতীয় পার্টির গণসংযোগ করা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেই সময় জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মী বাংলাদেশের কোনো রাস্তায় নেমে একটি মিছিল পর্যন্ত করতে পারেননি। হামলা-মামলা দিয়ে বাড়িতে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সেই সময় জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদের তত্ত্বাধায়ক সরকারের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি ছিল। তিনি নির্যাতনকারী, হামলা ও মামলা দায়েরকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আমৃত্যু অবস্থান নিয়েছিলেন। এটা জাতীয় পার্টির জন্য গলার কাঁটা। আজকে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য অনেকে মায়া কান্না করছেন। তারা ১৯৯১ সালের সেই ভয়ংকর অবস্থা বেমালুম ভুলে গেছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামের কলঙ্কের বোঝা আর বইতে চাই না। এটা থেকে পরিত্রাণ চাই। নির্যাতনকারী শাহাবুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এটা পুনরায় চালু হউক আমরা চাই না। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান উদ্দিন চুন্নুর সভাপতিত্বে ও নোয়াগাঁও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান সবুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন, উপজেলা জাতীয় মহিলা পার্টির প্রধান উপদেষ্টা জালিয়া লিয়াকত, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, আস্থা ফিডের কর্ণধার মো. সাইফুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য আবু নাইম ইকবাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান বাদল, সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও শম্ভপুরা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান বাবু, জেলা মহানগর শাখা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোদাচ্ছেরুল হক দুলাল, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রায়হান জয়, পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি এম এ জামান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা মো. শহীদ, জাতীয় যুবসংহতির সোনারগাঁ উপজেলা আহ্বায়ক কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু, সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় মহিলা পার্টি আহ্বায়ক নাছিমা আক্তার পলি, যুগ্ম আহ্বায়ক হনুফা আক্তার মিতু, নাসরিন আক্তার পান্না, শিল্পী বেগম মেম্বার, সনমান্দি ইউনিয়ন জাতীয় পার্টি আহ্বায়ক মো. আবুল হোসেন, জামপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আশরাফুল ভূঁইয়া মাকসুদ, বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. আলী মেম্বার, বারদী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আমীন হোসেন মেম্বার, সাদীপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল হাসেম, সাধারণ সম্পাদক জাকির সরকার, জামপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোতালিব ভূঁইয়া মেম্বার, জাতীয় যুবসংহতির সোনারগাঁ উপজেলার আহ্বায়ক কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু, সদস্য সচিব সিকান্দার আলী, সাকিব হাসান মেম্বার, আবুল কালাম মেম্বার, রিয়াজ ফকির মেম্বার, বাহাউদ্দীন মেম্বার, আ. রশিদ মেম্বার, জহিরুল ইসলাম মেম্বার, নুরে আলম শাহীন মেম্বার, বদিউজ্জামান মেম্বার, রফিকুল ইসলাম মেম্বার, সেলিম রেজা, শাহীন মোল্লা, হারুন অর রশীদ মেম্বার, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সোনারগাঁও উপজেলা সদস্য সচিব আলমগীর কবির মেম্বারসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জাতীয় পার্টি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা। সম্মেলনে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির নেতা দেওয়ান উদ্দিন চুন্নুকে সভাপতি ও সাইদুর রহমান সবুরকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।