তুফান সিনেমার বিরুদ্ধে ‘দর্শক ঠকানো প্রচারণা’র অভিযোগ!


কথায় আছে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। এ প্রবাদের সঙ্গে বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’র। সিনেমাটি মুক্তির আগে পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই অনেক হাঁকডাক দিলেও মুক্তির পর তুফান যেন থেমে গেল। শুধু মাল্টিপ্লেক্স নিয়েই নির্মাতা ও সংশ্লিষ্টদের যত মাতামাতি। দেশের সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর কোনো আওয়াজ নেই। এর কারণ, যতটা প্রত্যাশা করেছিল সাধারণ দর্শক এ সিনেমা নিয়ে, ঠিক ততটাই যেন নিরাশ হতে হচ্ছে তাদের। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মারামারি ছাড়া আর কিছুই পায়নি দর্শক। ছিল না গল্পের ধারাবাহিকতা ও চরিত্রের সঠিক বিন্যাস। চিত্র সমালোচকদের মন্তব্যও ঠিক এমন। এদিকে শুরু থেকেই এ সিনেমা নানা অভিযোগের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কপি দৃশ্য, গানের সুর নকল, অতিরিক্ত রেন্টালসহ মুক্তির শেষ মুহূর্তে প্রতারণার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয় সিনেমাটি। তবুও সব অভিযোগ তুলে রেখে দর্শক অপেক্ষায় ছিলেন একটি ভালো গল্পের সিনেমা দেখার। অবশেষে সেখানেও ব্যর্থ হলেন পরিচালক রায়হান রাফী। সিনেমা মুক্তির পর নতুন করে ফের সমালোচিত হতে হচ্ছে শাকিব খানসহ তুফান টিমকে। নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। ‘প্রচারণায় অভিনব কৌশল’ অবলম্বন করে দর্শকদের চোখে ধুলো দিতে গিয়ে যেন ফের বিপাকে পড়লেন রায়হান রাফি ও প্রযোজনা সংস্থা। এ নিয়ে সিনেমাপাড়ায় বেশ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন, ‘ঈদের দিন সকালেই শোনা গেছে ‘তুফান’ সিনেমা নাকি সব তছনছ করে দিয়েছে। প্রথম শো শেষের আগেই দেখা গেছে সিনেমাটি দেখার পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়ামূলক ভিডিও ছেড়েছে ‘ভাড়াটিয়া ইউটিউবার’রা। যা খুবই হাস্যকর লেগেছে। একটি সিনেমা এক শো হওয়ার পরই কীভাবে সেটা সুপারহিট হয়ে যায়! এগুলো যে প্রচারের একটা কৌশল তা সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের বুঝার বাকি থাকে না।’ সিনেমাটি নিয়ে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। সাধারণ দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে জানা গেছে, যারা অতিমাত্রায় শাকিবভক্ত তারাই শুধু ভালো বলেছেন। কিন্তু যারা একটি সুন্দর গল্পের সিনেমা দেখতে চেয়েছিলেন তারা বেশ হতাশ হয়েছেন বলেই জানা যায়। অনেকের ভাষ্য ছিল এমন, ‘সিনেমাটি এমনিতে ভালো হয়েছে, তবে গল্পের কোনো মিল পাইনি। আর অতিরিক্ত মারামারি ছিল। গল্প অনেকটা জাম্পিং করেছে। কোথা থেকে যে কোথায় যাচ্ছে গল্প আমরা বুঝতে পারিনি। জানি না পরিচালক আসলে কী বুঝিয়েছেন। আমরা সাধারণ দর্শক যদি না বুঝি তাহলে এ সিনেমা পরিচালক কাদের জন্য বানিয়েছেন?’ রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত মধুমিতা সিনেমা হলে হট্টগোল ও ভাঙচুরের মতো একটি অপ্রিতীকর ঘটনাও ঘটে এ সিনেমাকে কেন্দ্র করে। প্রযোজনা সংস্থা ও নির্মাতার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিকিট না পেয়ে উত্তেজিত দর্শকরা সিনেমা হলে ভাঙচুর করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্মাতা বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এ চিত্র একেবারেই বেমানান। টিকিট না পেয়ে সিনেমা হলে ভাঙচুরের মতো কিছু নেই। এগুলো যে আগে থেকেই সাজানো ছিল তা একটা নাবালকও বুঝবে। নিজেদের সিনেমার প্রচারে এ অভিনব কৌশল অবলম্বন করে তারা নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছে। তাতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে। এসব বানোয়াট ভিডিও বানিয়ে সিনেমা হিট করানো যায় না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অতিপ্রচারের কারণে দর্শক সিনেমা থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। সিনেমা শিল্পটা এভাবেই ধীরে ধীরে নষ্টদের দখলে যাচ্ছে বলেই অভিযোগ করেছেন অনেকে। সিনেমার প্রচার করতে হবে সেটা ঠিক, তবে এভাবে দর্শক ঠকিয়ে আর যাই হোক সিনেমা হয় না। সিনেমা একটি শিল্প, যা দর্শকদের ভালোবাসাতেই টিকে থাকে। দর্শক ঠকিয়ে নয়।’ প্রসঙ্গত, একজন গ্যাংস্টারের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘তুফান’। শাকিব খানের সঙ্গে এ সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নাবিলা ও কলকাতার মিমি চক্রবর্তী। এছাড়া আরও অভিনয় করেছেন, চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুজ্জামান সেলিম, সালাউদ্দিন লাভলু, গাজী রাকায়েত, মিশা সওদাগর প্রমুখ। শুরুতে সিনেমাটি ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার বলা হলেও শেষে এটিকে বাংলাদেশের একক প্রযোজনার বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিকে এ সিনেমার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। কারণ, বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ে যে বাজেট দেখিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করেছেন বিদেশে।