তোড়জোড় ৬ মেগা প্রকল্পে


জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছয়টি মেগা প্রকল্প শেষ করার তোড়জোড় চলছে। জনগণকে এসব প্রকল্প উপহার হিসাবে দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে চায় সরকার। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই প্রকল্পগুলো শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য চলছে শেষ সময়ের কার্যক্রম। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে নির্বাচনের বিষয়টিকে মানতে নারাজ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো যত দ্রুত শেষ হবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। আমরা সে চেষ্টাই করছি। এজন্য পর্যান্ত বরাদ্দ রাখাসহ নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত আছে। তাই প্রকল্প শেষ হওয়ার আনন্দের বিষয়, এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সংশ্লেষ নেই। শেষ হতে যাওয়া মেগা প্রকল্পগুলো হলো-মেট্রোরেল লাইন-৬, বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই ৮০-৯৮ শতাংশ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা চাচ্ছি বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ঘটুক। আমাদের উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচন বড় কথা নয়। এসব প্রকল্পের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা পরীক্ষা তো প্রতিনিয়তই হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে না? খেলোয়াড়রা খেলার মাঠে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিচ্ছে না? কাজেই নির্বাচন হলো সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সেটা যখন সময় আসবে তখন হবে। এজন্য যে মেগা প্রকল্প শেষ করতে হবে তড়িঘড়ি করে সেটি সঠিক কথা নয়। সূত্র জানায়, আগামী অক্টোবর মাসের শেষদিকে উদ্বোধনের কথা রয়েছে মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ। জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শতভাগ কাজ শেষ হয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ। সরেজমিন প্রকল্পটির আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ ঘুরে দেখা যায়, ওপরের ভায়াডাক্টসহ সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। নিচের দিকে স্টেশনগুলোর সিঁড়ি, অ্যাসকিলেটর (চলন্ত সিঁড়ি), টিকিট কাউন্টার এবং সাইডের রোডের কাজ চলছে। পাশাপাশি চলছে ফাইন টিউনিংয়ের কাজও। এ সময় দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৭ জুলাই এই অংশে ট্রায়াল রান হয়েছে। সে সময় লোড বেশি দিয়ে ট্রেন চালানোর পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ বিজয় সরণি এবং কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার ওপরে স্প্যানের দূরত্ব ৩০ ফুট রয়েছে। যেটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এজন্য লোড দিয়ে দেখা হয়েছে রেলপথ কতটা ব্যান্ড (বেঁকে যায়) করে। এরপর এখন চলছে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের পরীক্ষা। এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে খুলে দেওয়া হতে পারে কর্ণফুলী নদীতে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু টানেল। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করতে পারেন। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, এখন পর্যন্ত টানেলের কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলছে শেষ সময়ে কার্যক্রম। আশা করছি ডেডলাইন অনুযায়ীই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। আগামী অক্টোবর মাসেই উদ্বোধন হতে পারে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। এটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে বছরে সেবা পাবেন প্রায় এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী। ইতোমধ্যেই টার্মিনালটির নির্মাণকাজ ৮১ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক একেএম মো. মাকসুদুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, কাজ চলছে আশা করছি যথাসময়েই প্রকল্পটি শেষ করা যাবে। তবে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে কী কী কাজ চলছে। বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর ওপর দিয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুলে দেওয়া হবে। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত আগামী অক্টোবরে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সরেজমিন দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কবাতি লেগে গেছে। এখন পিচঢালাই চলছে। উড়ালসড়ক থেকে নামার র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শেষের পথে। সেই সঙ্গে বনানীতে টোল প্লাজা এবং লোড স্কেল বসানোর কাজও প্রায় শেষ। কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে নিতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। এছাড়া অক্টোবরের আগেই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে নির্বাচনের আগেই রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের পরিকল্পনা চলছে। জুন মাস পর্যন্ত পুরো প্রকল্পটির অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশ। শঙ্কা থাকলেও ডিসেম্বরের আগেই উদ্বোধনের জোর প্রচেষ্টা চলছে বিআরটি (এয়ারপোর্ট-গাজীপুর) প্রকল্পটি। এরই মধ্যে উড়ালপথের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ নির্ধারিত সময়েই এটি শেষ করতে কাজ চলছে বলে মঙ্গলবার জানান প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ। তিনি বলেন, এখন চলছে র‌্যাম্প তৈরির কাজ। সেই সঙ্গে সংযোগ সড়কের কাজও চলছে। পাশাপাশি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সব কাজই চলছে জোরেশোরে। আশা করছি ডিসেম্বরের আগেই উদ্বোধন করা হবে।