থমকে আছে নামিদামি সব শেয়ারের


ঢাকার শেয়ারবাজারের নামিদামি কোম্পানির শেয়ারের দর গত সাত থেকে আট মাস এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ওয়ালটন, বিএটি বাংলাদেশসহ সব শেয়ারের একই অবস্থা। এক দরে আটকে থাকায় পুরো বাজার আটকে গেছে। কোম্পানিগুলোর লাভ-লোকসানের হিসাবে পরিবর্তন আসছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাবও আছে এসব কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাবে। কারও কারও মুনাফা বেড়েছে। কারও কারও কমেছে। কিন্তু এর কোনো কিছুই এসব শেয়ারের দরে প্রভাব ফেলতে পারছে না। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনোভাবে এসব শেয়ারের দরপতন হওয়া চলবে না, সূচক পড়া যাবে না– নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এমন নীতি এর কারণ। এ নীতি বাস্তবায়নে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা (ফ্লোর প্রাইস) ঠিক করে দিয়েছে সংস্থাটি, যা পুরো বিশ্বে আর একটিও নজির নেই। সংস্থাটি কৃত্রিমভাবে বাজারের পতন আটকে রাখতে পারলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। একাধিক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যে পরিমাণ বিক্রির আদেশ পড়ে আছে, তা কার্যকর করতে গেলে এ বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বিক্রির আদেশ দিয়ে রাখলেও ক্রেতার অভাবে তাঁদের কোনো শেয়ারই বিক্রি করা যাচ্ছে না। ক্রেতা পেলে কেউ কেউ ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করছেন। দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে নামি শেয়ারগুলোর অন্যতম বহুজাতিক টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন। এ কোম্পানির শেয়ার গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ঠায় ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে আটকে আছে, যা কমিশন নির্ধারিত এ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ডিএসইর পাবলিক মার্কেটে গ্রামীণফোনের মাত্র ৪৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা এ সময়ের মোট লেনদেনের মাত্র আধা শতাংশ। এ সময়ে ডিএসইতে ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। গ্রামীণফোন দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের কোম্পানি। কোম্পানিটির বাজার মূলধন মোটের প্রায় পৌনে ৯ শতাংশ। বাজার মূলধনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানির শেয়ার সাত মাস ধরে ১ হাজার ৪৭ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ দরে আটকে আছে শেয়ারটি। এ কারণে এ সময়ে ডিএসইর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেনে এর লেনদেন ছিল মাত্র ৮ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গত বছরের শেষ ছয় মাসে ওয়ালটনের নিট মুনাফায় পতন হয়েছে। উল্লিখিত দুই শেয়ারের মতো বাজার মূলধনের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি শেয়ারের ৯টির ক্ষেত্রে একই অবস্থা দেখা গেছে। বিএটি বাংলাদেশের শেয়ার গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে। স্কয়ার ফার্মার শেয়ার গত ২৭ নভেম্বর থেকে ২০৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে আটকে আছে। টেলিকম অপারেটর রবির শেয়ারদর আটকে আছে ৩০ টাকা দরে গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে। এ ছাড়া রেনাটা, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, বেক্সিমকো লিমিটেড, মারিকো বাংলাদেশের শেয়ারও একই দশায়। কেবল এ তালিকার নবম স্থানে থাকা বার্জার পেইন্টসের দর সামান্য ওঠানামা করছে। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, এভাবে বাজারের স্বাভাবিক গতিকে আটকে রাখার নজির বিশ্বে আর একটিও নেই। এর ফলে শুধু যে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়; বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ‘ইমেজ’ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।