দক্ষিণ উপকূলের দুই জেলার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
সাগরপারের বরগুনা ও পিরোজপুর জেলাকে আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সেই লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে ৫৯ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণকাজ। প্রকল্প দুটিতে ব্যয় হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
এটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন সরাসরি যুক্ত হবে সমুদ্রবন্দর পায়রা ও মোংলা তেমনি এই দুই বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্র হবে উল্লিখিত দুই জেলা। সেই সঙ্গে স্থলবন্দর বেনাপোল হয়ে সহজেই পণ্য আমদানি-রপ্তানি সম্ভব হবে ভারতের সঙ্গে। ফলে মৎস্য ও কৃষিনির্ভর বরগুনা-পিরোজপুরের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
সমুদ্রবন্দর পায়রা ও মোংলার সঙ্গে বর্তমানে নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। পটুয়াখালীর পায়রা থেকে মোংলায় যেতে আসতে হয় বরিশালে। এতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ। এর বাইরে জেলা শহর বরগুনা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হয়ে মোংলা যাওয়ার একটি রাস্তা থাকলেও সে ক্ষেত্রে পাড়ি দিতে হয় তিনটি ফেরি। এই পথে মোংলা কিংবা খুলনা হয়ে বেনাপোল যেতে সময় ও জ্বালানি ব্যয় বেশি হওয়ায় সরাসরি কোনো যানবাহন যায় না বললেই চলে। অথচ এই দুই জেলা ও সমুদ্রবন্দরকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনা গেলে উন্নয়ন ঘটবে উপকূলের অর্থনীতির।
কারণ দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য বন্দর পাথরঘাটার অবস্থানও বরগুনা জেলায়। ফি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্যসম্পদের বিকিকিনি হয় সাগরপারের বিখ্যাত বন্দরে। আর সেসব ভেবেই জেলা দুটি ঘিরে বড় ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
পিরোজপুরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কটি মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত। এই সড়ক দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা হয় মৎস্য বন্দর পাথরঘাটাসহ বরগুনা ও পিরোজপুরের বিশাল একটি এলাকার। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে এই সড়কে। বিশেষ করে ইলিশের মৌসুমে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে ইলিশ বোঝাই ট্রাক।
তাছাড়া ভারতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাথরঘাটা থেকে যাওয়া মাছও যায় এই সড়ক ধরে। পিরোজপুর শহরসংলগ্ন কঁচা নদীতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা সেতু থাকলেও তা এই অঞ্চলের খুব একটা কাজে আসছে না। ওই সেতু হয়ে মোংলা-খুলনা কিংবা বেনাপোল যেতে পাড়ি দিতে হয় অতিরিক্ত ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা। ফলে বেড়ে যায় সময় ও জ্বালানি ব্যয়। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এই এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও পড়তে হয় বিপাকে। ৫৫ কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিতে হয় বলে এখনো চালু রয়েছে চরখালী পয়েন্টের ফেরি। এই অঞ্চলের যানবাহন ফেরি পার হয়ে যায় গন্তব্যে। এতেও ব্যয় হয় অতিরিক্ত সময়। বিষয়টি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও নজর দেয়নি কেউ।
সর্বশেষ চলতি বছরের গোড়ার দিকে পাথরঘাটা-চরখালী সড়ক প্রশস্ত করা ও চরখালী পয়েন্টে কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। পরে মন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হয় সড়ক ও সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া।
বরিশাল সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, গত ২৯ এপ্রিল অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। পাথরঘাটা থেকে চরখালী পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় তাতে। প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশে সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে কাজ। জমি অধিগ্রহণ ম্যাপ, সম্ভাবনা নিরূপণ ও প্রস্তাবিত সড়কের নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। এগুলো সম্পন্ন হলেই প্রকল্প পরিকল্পনা পাঠানো হবে ঢাকায়। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডার শেষে শুরু হবে কাজ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সওজ অধিদপ্তরের উদ্যোগই কেবল নয়, স্থানীয় সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ নিজেও তদারকি করছেন কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য। সড়ক প্রশস্তকরণের এই প্রকল্পে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১৮ ফুটের স্থলে ৩৬ ফুট চওড়া হবে সড়কটি। একইভাবে এটি উন্নীত হবে আঞ্চলিক মহাসড়কের মর্যাদায়।
চরখালী পয়েন্টে কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়াও জোরেশোরে চলছে। ১ মে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে দিয়েছে সেতু মন্ত্রণালয়। ওই বিভাগের উপসচিব আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে মৈত্রী সেতু, বৈদেশিক অর্থায়ন কিংবা উন্নয়ন সহযোগী দেশের মাধ্যমে চরখালী পয়েন্টে কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এর আগে স্থানীয় এমপি মহারাজের দেওয়া চিঠি ও মন্ত্রীর নির্দেশে স্থান পরিদর্শনসহ প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে সেতু বিভাগ। সেই পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। মূল নদী এবং সংযোগ সড়ক মিলিয়ে এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় দেড় কিলোমিটার। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এটি নির্মাণে দেড় হাজার থেকে ১৭শ কোটি টাকা ব্যয় হবে। পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত ও সেতু হলে রাজধানী ঢাকাসহ বন্দর নগরী খুলনা, মোংলা এবং স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন ঘটবে ১২টি রুটের যানবাহনের। এজন্যই সড়ক ও সেতুর ব্যাপারে বারবার মন্ত্রণালয়ে ছোটাছুটির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের সব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরে এই সড়ক ও সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।