দলে অবদান নেই, পরিচিত নন, তবু হতে চান এমপি


ভোটের রাজনীতিতে চলছে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হওয়ার মৌসুম। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। হিসাব অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা পাবে সংরক্ষিত আসনের ৩ জন এমপি, প্রতি ৬টি সাধারণ আসনের বিপরীতে একজন হিসাবে। তিনটি পদের জন্য শ’খানেক নারী প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। প্রতি আসনের বিপরীতে গড়ে ৩৪ জন করে আছেন লড়াইয়ে। তাদের সিংহভাগই চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। ইতোমধ্যে ৯২ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জোটের শরিক ৩ রাজনৈতিক দলেরও আছেন কয়েকজন প্রার্থী। এমপি হওয়ার লড়াইয়ে নামা এই শতাধিক নারীর অধিকাংশকেই চেনে না কেউ। এলাকার সাধারণ মানুষ দূরের কথা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছেও অপরিচিত অনেকে। দলের জন্য কোনো ত্যাগ কিংবা পরিশ্রম না থাকা এই এমপি প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিষয়টিকে ‘সুযোগসন্ধানীদের লড়াই’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ সংসদে এই অঞ্চলের ৫ জন ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। এদের মধ্যে ৩ জন স্থানীয় পরিচিত মুখ। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবদান রয়েছে তাদের। অন্য ২জন বরিশাল অঞ্চলের পুত্রবধূ হলেও তাদের মনোনয়ন আসে অন্য এলাকা থেকে। স্থানীয় ৩ জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোটে বরগুনা-২ আসনে সংসদ-সদস্য হয়েছেন সুলতানা নাদিরা। দলীয় মনোনয়ন চাইলেও পাননি সংরক্ষিত মহিলা আসনের অন্য দুই এমপি সৈয়দা রুবীনা মীরা এবং কানিজ সুলতানা হেলেন। রুবীনা’র বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া এবং হেলেন পটুয়াখালী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর মারা যান পিরোজপুরের বাসিন্দা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শেখ অ্যানি রহমান। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচি। এছাড়া জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুতফুন্নেসা খানও ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করছে আওয়ামী লীগ। প্রথম দু’দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৯২ জন। এদের মধ্যে বরিশাল জেলার ১৮, পটুয়াখালীর ২০, বরগুনার ১৬, ঝালকাঠির ৮, ভোলার ১৩ ও পিরোজপুরের ১৬ জন আছেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার জানান, প্রথম দু’দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের মধ্যে একজন আছেন সাধারণ আসনের সাবেক এমপি। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপিসহ বেশ কয়েকজন আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে হেরে যাওয়া নেতাদের পত্নীরাও আছেন এই তালিকায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করতে না পারা আ.লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহম্মেদও সংগ্রহ করেছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের নাম-পরিচয় যাচাই করে দেখা গেছে, তাদের সিংহভাগকেই চেনে না এলাকার মানুষ। এমনকি দলের নেতা-কর্মীরা পর্যন্ত জানেন না এদের সম্পর্কে। রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা না থাকলেও স্বামীর পরিচয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হতে নেমেছেন লড়াইয়ে। পিরোজপুরে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন লায়লা পারভিন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের স্ত্রী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়াল। বরগুনায় এমপি হওয়ার দৌড়ে নামা মাধবী দেবনাথ সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু’র স্ত্রী। ৫ বারের এমপি শম্ভু নির্বাচনে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু’র কাছে। অচেনা অপরিচিত নারীদের এমপি হওয়ার লড়াইয়ে নামা প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সুযোগ তো সবাই নিতে চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সুযোগসন্ধানীদের সুযোগ দেন না তা হয়তো এরা জানে না। ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, জাতীয় নির্বাচনেও তো হাজার হাজার লোক নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিল। জননেত্রী বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অতএব প্রার্থী হাজার হলেও সমস্যা নেই। জোটের শরিক জাতীয় পার্টি, জেপি (মঞ্জু) এবং ওয়ার্কার্স পার্টি থেকেও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বরিশাল-৬ আসনের সাবেক এমপি নাসরিন জাহান রত্না। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী রত্না এর আগে একাধারে ছিলেন পৌর মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা আসন এবং সাধারণ আসনের এমপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বরিশাল-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে ভোটে নেমে হেরে যান রত্না। পিরোজপুর-২ আসনে ভোটে পরাজিত জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী সাবেক এমপি তাসমিমা হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি প্রার্থী হিসাবে। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুতফুন্নেসা খানকেও আবার করা হতে পারে সংরক্ষিত আসনে এমপি।