দাবি আদায়ে ঢাকা ঘিরেই বড় কর্মসূচির ইঙ্গিত


সরকারের পদত্যাগে একদফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণার পাশাপাশি দাবি আদায়ে দেওয়া হয়েছে নতুন কর্মসূচি। আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণার দিনে ব্যাপক লোকসমাগমে উজ্জীবিত দলটির সব স্তরের নেতাকর্মী। আগামীদিনে রাজপথের কর্মসূচিতে এটার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করেন, একদফা ঘোষণার শুরুতে ব্যাপক উপস্থিতি সামনের আন্দোলন কেমন হবে-তার আগাম বার্তাই জানান দিচ্ছে। যে কোনো কর্মসূচি দিলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব-এমন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। একদফা দাবি আদায়ে ঢাকা ঘিরেই সাজানো হচ্ছে আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা। একদফা বাস্তবায়নের প্রথম কর্মসূচিতেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে। দেশের অন্যান্য মহানগর ও জেলায় একদিন পদযাত্রা ঘোষণা করলেও ঢাকাতে তা দুদিন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে তাদের এমন আচরণ অব্যাহত থাকলে দাবি আদায়ের পথ অনেকটাই সুগম হবে। কারণ, এবারের আন্দোলন সফলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ প্রশাসনকেই মূল বাধা হিসাবে দেখছেন তারা। সমাবেশ সফল করায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা বিভাগের সব জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাত্র ৩ দিনের প্রস্ততিতে সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আমাদের উজ্জীবিত করেছে। যা সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবি আদায়ে আগামীদিনের আন্দোলনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হামলা-মামলা ও নির্যাতনের পরও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে আছে-সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এমন একটা বার্তা পৌঁছেছে। বিএনপির প্রতি আস্থা বাড়ার পাশাপাশি সরকার পতনের আন্দোলনে সবাই রাজপথে নেমে আসবেন বলে আশা করি। তিনি বলেন, একদফা দাবি আদায়ের বিকল্প কিছু ভাবছি না। এ লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিক কর্মসূচি দিয়েছি। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলনে এবার বিজয় আসবেই। জানা গেছে, সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির এ ধারা পরবর্তী কর্মসূচিতেও ধরে রাখতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। একদফা দাবি আদায়ে ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। ঢাকার কর্মসূচির দিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, আন্দোলনের সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত ঢাকা ঘিরেই সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগের একদফা ঘোষণা ও দাবি আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে বিএনপি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরও মতামত নেওয়া হয়। তাদের প্রায় সবাই ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। বিগত আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে অনেকেই বলেন, ওই সময় সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় সেভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। দেশি-বিদেশি নানা মহল এমনকি গণমাধ্যমের নজর থাকে রাজধানীর দিকে। ঢাকায় ঢিলেঢালা কর্মসূচির কারণে পুরো আন্দোলনটাই ব্যর্থতায় রূপ নেয়। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবার ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন জোরদারে মত দেন সবাই। সবার মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির হাইকমান্ডও ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচির ওপর জোর দিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনাও করছেন তারা। শুরুতে পদযাত্রা, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণঅনশন, অবস্থান, হিউম্যান চেইনসহ শান্তিপূর্ণ ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনে চূড়ান্ত গতি আনা হবে। এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেওয়া হবে বড় কর্মসূচি। এরমধ্যে ঢাকামুখী রোডমার্চ, চলো চলো ঢাকা চলো, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি রয়েছে। চূড়ান্ত ধাপে ঢাকায় টানা অবস্থানের কথাও ভাবছে দলটির হাইকমান্ড। ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি সফলেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানগর নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচি সফলে মহানগরের পরেই আশপাশের জেলাগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরও সেভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে নয়াপল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিএনপি। তাদের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে চলছে আলোচনা। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে এমন পরিবর্তনের নেপথ্যের কারণ জানার চেষ্টা করছেন তারা। কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কিছুটা কাজ করেছে। এছাড়া আগামীদিনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকে অনেক কর্মকর্তাও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে যে কারণেই হোক তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। কারণ বিগত সময়ে সরকার পতন আন্দোলনে মূল বাধাই ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে তারা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করলে একদফা দাবি আদায়ের পথ অনেকটাই সুগম হবে। নানা ভয়ভীতির কারণে যারা এখনো আন্দোলনে সক্রিয় হননি তারাও রাজপথের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ভোরের সূর্য দেখলেই অনুমান করা যায় দিনটা কেমন যাবে। সরকারের পদত্যাগের ঘোষণার দিন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বলে দেয় এবার বিজয় আসবেই। বিশাল গণজমায়েত দেশের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে। আগামীদিনের কর্মসূচিতেই এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। তিনি বলেন, সরকার পতনের একদফা আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে দলের ভেতর ও সমমনাদের কাছ থেকে নানা পরামর্শ এসেছে। সবাই ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনের ওপর জোর দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ডও ঢাকা ঘিরেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে আলাল বলেন, তাদের আচরণ এমনটাই হওয়া উচিত। বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে কখনো আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ হিসাবে পায়নি। পুলিশের সঙ্গেই আমাদের লড়তে হয়েছে। তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করি। তবে ভবিষ্যতে তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে শতভাগ আশাবাদী হতে পারছি না।