দুই মাসেও শনাক্ত হয়নি রংপুরের সেই অস্ত্রধারীরা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের দিন রংপুরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১০ অস্ত্রধারী। ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি এসব অস্ত্রধারী। এমনকি অস্ত্র উদ্ধার অভিযানেও উদ্ধার হয়নি সেসব অবৈধ অস্ত্র। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
ঘটনার দিন আওয়ামী অস্ত্রধারীদের গুলি চালানোর একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে হাতে। ভিডিওতে দেখা যায়, পিস্তল হাতে হেলমেট পরা দুই ব্যক্তি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা অন্য নেতাকর্মীদের হাতেও ছিল দেশীয় অস্ত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, সেদিন অন্তত ১০ অস্ত্রধারী গুলি চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকে নগরীর টাউন হলের সামনে জড়ো হয় ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা রাস্তা অবরোধ করে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। হঠাৎ দুপুর ১২টার দিকে সুপার মার্কেটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে গুলি চালাতে চালাতে ছাত্র-জনতার দিকে আসতে থাকে। এ সময় তাদের হাতে ছিল পিস্তল, রিভলবার, শটগানসহ বিভিন্ন অস্ত্র। হামলার মুখে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার মার্কেটের সামনে এলে পাল্টা ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পায়রা চত্বর মোড়ে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে ছাত্র-জনতা তাদের অফিস জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার পরপরই রংপুর ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী। বাকিরা পরদিন শেখ হাসিনার পতনের পর এলাকা ছাড়ে। ঘটনার দুই মাস পার হলেও অস্ত্রধারীরা এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের দুজন নেতা বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে আগের দিনই পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের ডাকা হয়। এসব পরিকল্পনা করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নাসিমা জামান ববি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন ও সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
তারা বলেন, অনেকে পালিয়ে ভারতে যেতে চাইলেও পারেননি। নেতাকর্মীদের একটা অংশ গোপালগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে আছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহার করছেন বলেও জানান এই যুবলীগ নেতারা।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ আসামিকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের অন্যতম সমন্বয়ক ইমরান হোসেন বলেন, অস্ত্রধারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা এবং সরকারকেও এ বিষয়ে মাথা ঘামাতে দেখছি না। আমর কী রকম বিপদে আর হুমকির মুখে আছি, তা বলার বাইরে। যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান কার্যকর হয়নি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। অস্ত্র উদ্ধারের পর তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।