দুর্নীতি বন্ধ করে বিলাসী জীবন পরিহার করুন


তৈরি হচ্ছে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ১১টি বিষয়। এগুলো হলো-জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাজস্ব আয় বাড়ানো, সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা। আরও আছে, শিল্পের ক্ষেত্রে পাট, চামড়া এবং কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, এসডিজির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, ব্লু এবং স্পেশ ইকোনমি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। বৃহস্পতিবার এসব বিষয় তুলে ধরতে সব সচিবকে ডেকে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা করে পরিকল্পনা কমিশন। এ সময় সচিবদের দুর্নীতি বন্ধ করে জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসী জীবনযাপন পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এমএ মান্নান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্ব পালন করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এমএ মান্নান, মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহম্মদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ড. মো. কাউসার আহম্মদ নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। সেজন্য ইতোমধ্যেই টেকনিক্যাল পেপার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ২৫-৩০টি ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার তৈরির কাজ চলছে। এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া ধারণাপত্রের ওপর মতামত নিতেই সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হলেও প্রক্রিয়াধীন নতুন পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আছে চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কালে। নতুন পরিকল্পনায় ২০২৮ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নীতিসহায়তা কীভাবে আরও দেওয়া যায় সেসব থাকবে পরিকল্পনায়। পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হলে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কীভাবে রাজস্ব বাড়বে সেসব কৌশল রাখা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সচিবরা প্রায় ১২০টির মতো মতামত দিয়েছেন। যেগুলো শুধু লিখে নেওয়া হয়েছে। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এগুলো পরিকল্পনায় যুক্ত করা হবে। তবে একাধিক সচিব বলেছেন, পরিকল্পনার যেসব লক্ষ্য ধরা হবে সেগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয়। যাতে পরিকল্পনার শেষে সেসব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়। এছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিজমি রক্ষাসহ নানা বিষয় যুক্ত করতে মতামত দিয়েছেন সচিবদের। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এমএ মান্নান সভায় বলেন, সচিবরা দুর্নীতি বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এটি এখন আমাদের দেশে অন্যতম বড় সমস্যা। উন্নয়নে বাধা হিসাবে দেখা দিয়েছে দুর্নীতি। সেই সঙ্গে সচিবরাসহ সরকারি কর্মচারীদের জাঁকজমকপূর্ণ ও বিলাসী জীবন পরিহার করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভোগবিলাস, অপচয়, গাড়ি ও বাড়ির জৌলুস বাদ দিতে হবে। যা প্রয়োজন সেই সুবিধা নেবেন। বাড়তি কিছু নেবেন না। তিনি আরও বলেন, নতুন যারা বিসিএস ডাক্তার হবেন তাদের কমপক্ষে দুই বছর বাধ্যতামূলক কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করার বিধান করতে হবে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এর বিকল্প নেই। সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। আগামী পাঁচ বছর এটি বাস্তবায়ন হবে। পরিকল্পনা তৈরির জন্য জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় সচিবদের মতামত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে সচিবরা খোলামেলা মতামত দিয়েছেন, যা পরিকল্পনাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।