দুর্নীতি বাংলাদেশে ক্যান্সারের মতো: প্রধান বিচারপতি


নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দুর্নীতি বাংলাদেশে ক্যান্সারের মতো কাজ করছে। এটা শুধু বিচার বিভাগে নয়, সব জায়গাতেই আছে। সবাই উদ্যোগ হলে দুর্নীতি অপসারণ করা কোনো কঠিন কাজ হবে না। চেষ্টা করব সহকর্মীদের নিয়ে দুর্নীতি কিভাবে কমানো যায়। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ওপর আস্থার ঘাটতি নেই, এ কথা আমি বলব না। বিচার বিভাগের ওপর আস্থার কমতি যেটা হয়েছে, এটা শুধু বিচারকদের জন্য তা নয়। এটার অনুষঙ্গ অনেক। ধীরে ধীরে আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই এ আস্থাটা আমরা বাড়াতে চেষ্টা করব। বুধবার দায়িত্বভার গ্রহণের পর সুপ্রিমকোর্টে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিচার বিভাগ- এটা আমি মনে করি না। বিচারকরা বিচারকদের কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মতো করে। আমি শুধু একটি কথা বলব, আমাদের আইনজীবী বন্ধুরা যারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন তারা আদালত অঙ্গনে যেন সহনশীলতার পরিচয় দেন। তারা যেন একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। তাহলে এ উত্তাপগুলো আদালতে ছড়াবে না। সমাজের রাজনৈতিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না এবং এটা আমার বিষয়ও না। আমাদের সামনে যখন বিচার আসে, কোনো একটি মামলা আসে, সেটা আমাদের এবং অধঃস্তন আদালতে নিষ্পত্তি করতে হয়। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এভিডেন্সের অভাবে মামলা প্রমাণ হলো না; এটা এক জিনিস। আরেকটি হলো মামলাটি মিথ্যা। মিথ্যা যখন কোর্ট বলে তখন তার রেমিডি আছে। এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা মানুষ করে না তা না, হয় তো করে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ হলো সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে। সামাজিক পরিবর্তন না আনলে শুধু বিচার করে, আইন-আদালত করে সমাজকে সঠিক পথে আনতে পারবেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপ্রার্থী কে কখন হবে কেউ বলতে পারে না। আপনার ঘরে কখন ঝামেলা আসবে, আমার কখন ঝামেলা আসবে আমরা তো কেউ জানি না। আসলে আমাদের কোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়। তিনি বলেন, কোর্টের শরণাপন্ন হলে এ বিচার বিভাগের শুধু আমরা যারা বিচারক আছি, তাদের দিয়েই কিন্তু বিচার বিভাগ না। আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন আইনজীবীরা, তাদের সহকারীরা। আমাদের সাব-অর্ডিনেট জুডিশিয়ারির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং আরও অন্যান্য স্টাফ। সবাই যদি আন্তরিক হয় তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। মামলা জট প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলার জট সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। মামলার জট কমানোটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমার কাছে ময়মনসিংহ জেলা জজশিপ থেকে একটি রায়ের কপি দিয়েছে আমাদের মিউজিয়ামে রাখার জন্য। শুনলে আপনারা অবাক হবেন, এটা ১৮৬১ সালের রায় কিন্তু মামলাটি শুরু হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। তখনো একটি মামলা শেষ হতে চার-পাঁচ বছর লেগেছে। এখানে আমার মনে হয়, আইনের সংস্কার একটি বড় বিষয় এবং এই আইনি সংস্কারটি সরকার নিশ্চয়ই চিন্তা করবেন। ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, এডিআর এবং মেডিয়েশনের মাধ্যমেও আমরা অনেক মামলা কমাতে পারি। কোর্টের বারান্দা থেকে মানুষকে ঘরে ফেরাতে পারি। তারা ঘরে বসে, বিচারালয়ে না গিয়ে একই রকম ফল অন্যভাবে পেতে পারেন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে বা মেডিয়েশনের মাধ্যমে। সেগুলো বাংলাদেশে ডেভেলপ করছে ধীরে ধীরে। আমরা চেষ্টা করব এটাকে আরও গতিশীল করতে, যাতে মানুষকে আদালতমুখী খুব একটা না হতে হয়। তিনি বলেন, আস্থার ঘাটতি সর্বত্রই আছে আমাদের। বিচার বিভাগের ওপর আস্থার ঘাটতি নেই এ কথা আমি বলব না। আমাদের ওপরে আস্থার যেটা আপনারা বলছেন, এখনো আপনার কোনো অসুবিধা হলে আপনি কোর্টেই যাবেন। আমাদের ডিসপোজালের রেট কিন্তু দিনের পর দিন বাড়ছে। মানুষের যদি আস্থাই না থাকবে, মানুষ কোর্টে আসবে কেন! আস্থা আছে বলেই মানুষ কোর্টে আসেন। তবে হ্যাঁ, আস্থা হান্ড্রেড পারসেন্ট আছে এ কথাটা আমি বলতে পারব না। এটা বলার মতো অবস্থায় আমরা নেই। যেমন আমি বলেছি, কোনো সেক্টর নেই যেটার ওপর মানুষের আস্থার কমতি হয়নি। ‘বিচার বিভাগের ওপর আস্থার কমতি যেটা হয়েছে, এটা শুধু বিচারকদের জন্য তা নয়। আমি বলেছি এটার অনুষঙ্গ অনেক। আইনজীবীরা আছেন, তাদের সহকারীরা আছেন, স্টাফরা আছেন। বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন মানুষ, সমাজে যেহেতু দুর্নীতির একটা প্রশ্ন আছে, সেই কারণে কখনো কখনো মানুষ মিসলিড হয়। সেই কারণে কোনো কোনো সময় আস্থার যে অভাব হচ্ছে না তা না। তবে আস্থা নেই এ কথাটা আমি বলতে রাজি না। আস্থা আছে। আস্থার হয়তো কিছু কমতি আছে। এটা ধীরে ধীরে আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই এ আস্থাটা আমরা বাড়াতে চেষ্টা করব’- বলেন প্রধান বিচারপতি।