নেতাকর্মীদের উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের


সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে বিএনপির মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে শেষ মুহূর্তে চলে নানা নাটকীয়তা। বুধবার দিনভর নাটকীয়তার পর কর্মসূচি একদিন পেছানোর মধ্য দিয়ে এর আপাতত অবসান ঘটে। আগামীকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। রাত নয়টায় গুলশান কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিন বেলা ২টায় নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না এমন প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত যে কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যে কোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃতপক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসাবেই দেখবে। এমন অপচেষ্টায় নিয়োজিতদের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসাবেই গণ্য করবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে এই শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংযত থেকে কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির সমমনা দলগুলোও একদিন পিছিয়ে কাল রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে সমাবেশ করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাই সরকার ও সরকারদলীয় বিভিন্ন বাহিনীর নানা উসকানি, এমনকি এক বছরে ২০ জন নেতাকর্মীর হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হওয়ার পরও সীমাহীন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছি। এমনকি এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হোটেল এবং সারা দেশে নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়ার প্রমুখ। এদিকে ঢাকার মহাসমাবেশে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ সমাবেশ হবে এমনটা ধরে নিয়ে আগেভাগেই তারা রাজধানীতে চলে আসে। আত্মীয়স্বজন, ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীর বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার সকাল থেকে অনেকেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সমাবেশের স্থান নিয়ে নাটকীয়তার পর বিকালে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কার্যালয়ের সামনে থেকে নেতাকর্মীদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে তারা সবাই স্থান ত্যাগ করেন। নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। আগামীকালের মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। ঢাকাকে ঘিরেই থাকবে টানা কর্মসূচি। এর মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একইদিনে সভা-সমাবেশ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ঢাকায় টানা অবস্থানের চিন্তাভাবনা রয়েছে। নতুন কর্মসূচির ঘোষণার আগে দাবি মেনে নিতে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হতে পারে। তবে এখনো নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। অনুমতি চেয়ে সোমবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের দিনক্ষণ পেছানোর অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। পুলিশের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে বৃহস্পতিবারই মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে দুই স্থানে অনুমতি দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়। বিএনপি চাইলে বিকল্প স্থান হিসাবে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে পারবে। এমন নাটকীয়তার মধ্যে বিকালে জরুরি বৈঠকে বসে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রয়োজনে একদিন পিছিয়ে হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই কর্মসূচি পালন করতে একমত হয়। দলের এমন অবস্থান পুলিশকে অবহিত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানোর অনুরোধ করেন। এরপর আবার বসে স্থায়ী কমিটির বৈঠক। এতে স্কাইপিতে যোগ দেন লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে সমাবেশের স্থানসহ পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, সমাবেশের স্থান নিয়ে মহানগরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং সমমনা দল ও জোট নেতাদের পরামর্শ নেওয়া হয়। সবাই এক সুরে বলেছেন, কোনোভাবেই গোলাপবাগ মাঠে যেন সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়। সেখানে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিলে শুরুতেই নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে শুক্রবার নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। যা পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, অনির্বাচিত ও অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, গুম, খুন, অত্যাচার নিপীড়নের শিকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জনগণের রক্তার্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আজ একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ দেশের সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পালনের ঘোষণা দেয়। সমমনা দলগুলো একই কর্মসূচি ঘোষণা করে। তিনি জানান, আমরা দলের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে এই মহাসমাবেশের বিষয়টি ২৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের আপত্তি এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে জনদুর্ভোগের অজুহাতে সমাবেশ অনুষ্ঠানে আপত্তি জানায়। যদিও ইতোপূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তারপরও পুলিশ তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। আমাদের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার সমাবেশের অধিকারে আপত্তি জানিয়েছে।