নেতৃত্বে যোগ্যদের খোঁজে বিএনপি হাইকমান্ড


উনিশ দিন ধরে নেতৃত্বশূন্য ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ বিএনপির চার গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক শাখা। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদলে কিছু বিতর্ক ওঠায় সময় নিয়ে কমিটি দিতে চান হাইকমান্ড। এছাড়া দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিও নতুন কমিটি দিতে বিলম্ব হওয়ার আরেকটি কারণ। চার মহানগর ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে যোগ্য ও পরীক্ষিতদের খোঁজা হচ্ছে। শীর্ষ পদ পেতে বসে নেই পদপ্রত্যাশীরাও। তারাও নানাভাবে লবিং করছেন। তবে মহানগরগুলোর নতুন কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতারা বেশি প্রাধান্য পেতে পারেন-বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলন ব্যর্থতার মূল্যায়ন সাপেক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে ১৩ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সঙ্গে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া বিলুপ্ত করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম শাখা ছাত্রদলের কমিটিও। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, অনেকের ধারণা ছিল বিলুপ্তির পর দু-তিন দিনের মধ্যেই ঢাকাসহ চার মহানগর ও যুবদলের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। কিন্তু ঈদুল আজহার ঠিক দুই দিন আগে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদলে বেশ কয়েকজনকে অবমূল্যায়ন ও কয়েকজনকে অতিমূল্যায়নের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে তৃণমূলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এজন্য কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী দিনে কমিটি গঠিত বা রদবদলে আর কোনো বিতর্ক চান না। যারা আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন ও ত্যাগী-নির্যাতিত তাদের হাতেই নেতৃত্ব দিতে চান। এছাড়া ঈদের পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থ হয়ে পড়া এবং এ কেন্দ্রিক ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় সমাবেশ কর্মসূচিও নতুন কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ার আরেক কারণ। সূত্রমতে, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া বাসায় ফেরার পর এসব কমিটি দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। এখন কয়েকদিনের মধ্যে মহানগরগুলো ও যুবদলের নতুন কমিটি দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কমিটি গঠন, পুনর্গঠন চলমান প্রক্রিয়া। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় যুবদলসহ কয়েকটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলের হাইকমান্ড যখনই উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই সেখানে নতুন কমিটি দেবেন।’ এদিকে অতীতের আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য বরাবরই দায়ী করা হয় ঢাকা মহানগরকে। এজন্য আগামীতে তরুণ নেতৃত্বে ঢাকার দুই মহানগরকে সাজানোর পরিকল্পনা করছে দলের হাইকমান্ড। মহানগর ও যুবদলের নতুন নেতৃত্ব গঠনে স্থায়ী কমিটিসহ দলের বিভিন্ন ফোরামের নেতাদের ইতোমধ্যে মতামত নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এদিকে নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আসতে লবিং-তদবির, দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা ব্যাপক শোডাউনও করেছেন। ওই সমাবেশে যুবদলের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরাও শোডাউন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্ব গঠনে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে কাউকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হলে মহানগর উত্তর ঠিকভাবে চলবে না বলে ইতোমধ্যে হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এখানে সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হককে দুই শীর্ষ পদের একটিতে রেখে কমিটি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সহসম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর। নীরবের নাম আগে আলোচনায় না থাকলেও সম্প্রতি তিনি কারামুক্ত হওয়ায় কমিটি ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। নীরবের সঙ্গে ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্কাইপিতে কথা বলেছেন। এ চারজনই মাঠের পরীক্ষিত নেতা। এছাড়াও পরিছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত বিদায়ি কমিটির সিনিয়র সদস্য তাবিথ আউয়ালের নামও আলোচনায় রয়েছে। তাদের বাইরে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিদায়ি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, মোস্তফা জামান, আক্তার হোসেন এবং সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদের নামও। তবে দক্ষিণ বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। শুরু থেকেই বিদায়ি কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জোরালো আলোচনা রয়েছে। তাদের বাইরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, হাবিবুর রশীদ হাবিব, বিদায়ি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, আনম সাইফুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ ও সিনিয়র সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের নামও আলোচনায় রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন সদ্য বিদায়ি কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ, এসএম সাইফুল ইসলাম, নাজিমুর রহমান, সদস্য এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীসহ ডজনখানেক নেতা। এর মধ্যে রাজপথের নেতা হিসাবে পরিচিত ডা. শাহাদাত হোসেনকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবও করা হতে পারে। বরিশাল মহানগরের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সদ্য বিদায়ি কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন শিকদার, সদস্য আফরোজা খানম নাসরীন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, সাবেক আহ্বায়ক মজিবুর রহমান নান্টুসহ ডজনখানেক নেতা। এর মধ্যে গত আন্দোলনে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জিয়াউদ্দিন শিকদার ও আফরোজা খানম নাসরীন রাজপথে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ মহানগরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের মতামতকে এবারও গুরুত্ব না দিলে আগের মতোই ‘দুর্বল’ কমিটি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় সারা দেশে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি চান। নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী হিসাবে বিদায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না এবং সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরকে রাখা না হলে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে থাকতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের বাইরে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিদায়ি কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহীন, সদস্য সাঈদ ইকবাল টিটু (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার) ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। এছাড়াও শীর্ষ পদে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন-ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। পদপ্রত্যাশী এসব নেতা রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত হিসাবে পরিচিত।