পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দায় এড়াতে পারেন না
অনলাইন নিউজ ডেক্স
জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়িতে করে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান। গাড়ি থেকে বিমানবন্দরে নামার পর হঠাৎ একদল লোক এসে আইন উপদেষ্টাকে ঘিরে ধরেন। তাকে বিরক্ত করতে থাকেন। উচ্চশব্দে কথা বলতে থাকেন। উপদেষ্টাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন স্বৈরাচারি হাসিনার দোসর সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনা সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এ সময় আসিফ নজরুল বলছেন, ‘আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? এভাবে কথা বলতে পারেন না। আপনি অনেক খারাপভাবে কথা বলছেন, খারাপ ব্যবহার করছেন। আপনাদের ল্যাঙ্গুয়েজ এমন কেন? আপনারা আসেন, কথা বলবো। তখন হেনস্তাকারীরা বারবার তর্ক করতে থাকেন। তাদের একজন বলেন, আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতার পক্ষের লোক, আপনারা বিপক্ষের লোক। এরপর আসিফ নজরুল বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে যান। হেনস্তাকারীরা তখনও তার পিছু নেন। ‘পাকিস্তানি রাজাকার, বাংলাদেশ সরকার’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তাকারীরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। সেখানে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্ন হলো, সরকারের একজন উপদেষ্টা ওই সময়ে বিমান বন্দরে উপস্থিত হচ্ছেন বা হবেন সে কথা আওয়ামী লীগ নেতারা জানলো কীভাবে? দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছাড়া এ তথ্য বাইরের কারো জানার কথা নয়। নি:সন্দেহে বলা যায়, সেখানকার দূতাবাসের কর্মকর্তারাই উপদেষ্টার উপস্থিতির কথা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রোটকলে প্রচণ্ড ঘাটতি ছিল। মিশন সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি। এজন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতাকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যাদেরকে পদায়ন করেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পতিত স্বৈরাচার হাসিনার দোসর। সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসও তার ব্যতিক্রম নয়। সেখানে এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন হাসিনার দোসররা। সর্বশেষ সেখানকার রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুফিউর রহমান। যাকে সুইজারল্যান্ড থেকে সরিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর চেষ্টা চলছিল। পত্রপত্রিকায় লেখালেখির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
সুফিউর রহমান ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের (২০২৪) মে পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জেনেভার জাতিসংঘ অফিসগুলো ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের জেনেভা অফিসে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করতেন এবং যুক্তি উপস্থাপন করতেন। তাকে সরানোর পর তার অনুসারীরা এখনও জেনেভাতেই বহাল আছেন। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তার নেপথ্যের কারিগর সেই সব কর্মকর্তারাই।
এদিকে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় এখনও মুখ খোলেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একজন উপদেষ্টাকে হেনস্তার পেছনে কারা জড়িত, কিভাবে তারা উপদেষ্টার গতিপথ অনুসরণ করলো-সে বিষয়ে কারও কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নিস্ক্রিয়তার জন্য অনেকেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়ী করেছেন। নেটিজেনরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা আওয়ামী লীগ এখনও বসে বসে আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা পাচারে সহযোগিতা করে আসছে। উপদেষ্টাকে হেনস্তা করার পেছনে এদের হাত আছে। শিগগিরি এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন তারা। একই সাথে তারা এই ঘটনার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়ী করে বলেছেন, তিনি স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন বন্ধ করতে না পারলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
আ.লীগ নেতা শ্যামলের বিচার চায় এলাকাবাসী
এদিকে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তাকারী আওয়ামী লীগ নেতা শ্যামল খানের শাস্তি চায় টাঙ্গাইলের সাধারণ মানুষ। শ্যামল খান টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়ার বাসিন্দা ও সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই এলাকার মনসুর বিন সাইদ বুলবুল বলেন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে এই দুর্ব্যবহার করা শ্যামল খানের ঠিক হয়নি। আমরা তার শাস্তি দাবি করছি। আকুরটাকুর পাড়ার আরেক বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় শ্যামল খান দেশে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের টাকা দিতেন। তিনি আওয়ামী লীগের ডোনার ছিলেন। সেই টাকা দিয়ে অবৈধভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তিনি যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা টাঙ্গাইলের জন্য মানহানিকর। আমরা তার বিচার চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মো. আল আমিন বলেন, ড. আসিফ নজরুল একজন সম্মানিত ব্যক্তি। ২৪-এর অভ্যুত্থানের একজন যোদ্ধা। আজ রোববার শ্যামল খানের বাসার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। শ্যামলা খানের ভাই কামরুল হাসান খান বাবুল বলেন, শ্যামল খান প্রায় ৩০ বছর যাবত সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে শ্যামল চতুর্থ। তিনি বিগত ১০ বছর যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
কাউকে ছাড়া হবে না
উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিনোদন জগতের সংগীতাঙ্গনের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে হেনস্তাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। একই কথা বলেছেন আরেক গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী।
প্রিন্স মাহমুদ বলেন, আসিফ নজরুল ভাইকে এয়ারপোর্টে হেনস্তাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। প্রবাসী যারা সুইজারল্যান্ডে আছেন, তাদের খুঁজে বের করুন। এদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করুন। বাংলাদেশে কোথায় এই গণহত্যাকারীর দোসররা থাকেন ঠিকানা বের করুন। জনপ্রিয় এ সুরকার বলেন, আসিফ ভাইকে একা পেয়ে আওয়ামী কাপুরুষরা যা করেছে, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে— তাদের খুনি নেত্রী বিদেশ সফরে গেলে জনতার প্রতিবাদের ভয়ে শত দেহরক্ষী ও স্তাবক চামচা পরিবেষ্টিত হয়েও হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। আসিফ নজরুল ভাই, ভালো মানুষদের এমনই হয়।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।