পাইপলাইনে জমা ৫ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
আগের তুলনায় বৈদেশিক অর্থ ব্যয় বাড়লেও পাইপলাইনে এখনো জমে আছে বিপুল পরিমাণ প্রতিশ্রুত সহায়তার অর্থ। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে আছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় চলমান ডলার সংকট কাটাতে পাইপলাইনের অর্থ ব্যবহারে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নতুন সকারের প্রথম একনেক বৈঠকেই নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছিলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ আছে এমন প্রকল্পের গতি বাড়াতে হবে।’
তার নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো ৬ মার্চ বৈঠকে বসছেন মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বাড়লেও ঋণ পরিশোধের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে নিয়মিত প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করতে বলেছেন। তার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে। ৬ মার্চ এনইসি সম্মেলন কক্ষে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থপ্রাপ্তি এবং ডিজিটাল একনেক কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ডিজিটাল একনেক প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ১০০টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব আনা হবে। ফলে কাগজের পরিবর্তে অনলাইনেই প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বিদেশি সহায়তার আকার দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারে। অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনে ছিল ৪৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থবছরে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান মিলে বিদেশি সহায়তায় ছাড় হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ৫০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা অর্থবছর শেষে কমে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাইপলাইনের অর্থ আরও কমে যায়। পাইপলাইনে সব থেকে বেশি ঋণ ও অনুদান পড়ে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পরেই রয়েছে আমেরিকা-জাপানের কাছে ২ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ঋণ। বিশ্বব্যাংকের কাছে পড়ে আছে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ভারত ও চীনের কাছে আছে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ পড়ে আছে। ৮টি বড় উন্নয়ন সহযোগীর কাছে ১০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে পাইপলাইনে।
এদিকে সোমবার প্রকাশিত ইআরডির মাসিক এক অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এক্ষেত্রে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে বাংলাদেশ সুদ পরিশোধ করেছে ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে সুদ ৭৬ কোটি ৭ লাখ এবং আসল ১০৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট পরিশোধ করা হয়েছিল ১২৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে সুদ ছিল ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ এবং আসল ৯১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুদ ও আসল পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে অর্থছাড় বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে ছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৪২১ কোটি ৩৬ লাখ এবং অনুদান ১৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল মোট ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৪০৪ কোটি ৭৬ লাখ এবং অনুদান ছাড় হয় ২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার।
এছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। এক্ষেত্রে গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতি এসেছে ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ হিসাবে ৬৭৪ কোটি এবং অনুদান হিসাবে এসেছে ৪৩ কোটি ২১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৫৩ কোটি ৪৩ লাখ এবং অনুদান ২৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৫৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।