পোশাক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক


তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চল সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও টঙ্গীতে শনিবার বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে বাইরে কোনো বিক্ষোভ না হলেও আশুলিয়ায় কিছু কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ হয়েছে। ফলে ১৭টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : সাভার-আশুলিয়া : ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার শিল্প এলাকায় সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ যৌথ টহল দিচ্ছে। এজন্য কিছু কারখানায় শ্রমিকরা দাবি আদায়ে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে তারা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ আশুলিয়ার অন্তত ১৭টি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে নিউ এইজ, নাসা, অনন্ত ও শারমিনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজের উদ্দেশ্যে কারখানায় প্রবেশ করে। তবে তারা কাজে যোগ দেয়নি। এরপর তারা কারখানার ভেতরে দীর্ঘ সময় কর্মবিরতি করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বন্ধ ঘোষণা করে। সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা যেসব এলাকায় টানা কয়েকদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টের সামনে মোতায়েন রয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা। আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি সড়কে টহল দিচ্ছে তারা। মালিকপক্ষের সঙ্গে দাবি-দাওয়া আদায়ের বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় বেশকিছু কারখানা আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় কয়েকদিন যাবত অস্থিরতা চলছে। অনন্ত অ্যাপারেলস, আল-মুসলিমসহ বেশ কয়েকটি কারখানার কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে শনিবার কোনো কারখানায় হামলা ভাঙচুর কিংবা ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা বিক্ষোভ করার পাশাপাশি কাজ না করে যার যার মতো কারখানা থেকে বেরিয়ে চলে যায়। এদিকে শ্রমিকদের বাসায় থাকার অনুরোধ জানিয়ে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার ইপিক গ্রুপের পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড কারখানাটি এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার পরিস্থিতি শনিবার অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কারখানায় অসন্তোষ সৃষ্টি করার দায়ে রাতে যৌথ অভিযানে দুজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটকরা হলেন, আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার মোহাম্মদ আহসান উল্লাহর ছেলে রিসান ভুইয়া (২২) এবং একই এলাকার মোহাম্মদ বাচ্চুর ছেলে মিঠুন হাসান (২৩)। তারা আন্দোলনের জন্য শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছিল। শনিবার সকাল থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জিরানী বাজার, নরসিংহপুর, জামগড়া, বাইপাইল, পলাশবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায় কোথাও কোনো আন্দোলন নেই। পোশাক কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। এছাড়া আশুলিয়ার ডিইপিজেড নতুন ও পুরাতন জোনে কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। দুই ইপিজেডের সামনেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। গাজীপুর : গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শনিবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। শুক্রবার রাতে যৌথ বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। তবে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানা গেছে। শিল্প পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিন গাজীপুর জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তুচ্ছ দাবি নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এসব দাবি নিয়ে মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়েছে। তবে শিল্পকারখানা রক্ষায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, থানা-পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হলে শুক্রবার থেকে গাজীপুরে কোথাও কোনো শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। যৌথ বাহিনীর অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও শুক্রবার রাতের অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। শিল্প পুলিশ শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল। কোনাবাড়ী এলাকার তোষুকার কারখানার শ্রমিক কফিল উদ্দিন বলেন, আমরা যারা শ্রমিক, কাজ করে টাকা পাই, আমরা এসব আন্দোলনের মধ্যে যাই না। বহিরাগত ব্যক্তিরা নানাভাবে উসকে শ্রমিকদের দিয়ে আন্দোলন করায়। আমরা মনে করি, যত বেশি কাজ করব, তত বেশি টাকা পাব। যারা শিল্পকারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর): গাজীপুরের টঙ্গীতে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর ঠেকাতে বিএনপির নেতারা টানা চার দিন যাবত অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে পাহারা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে এই সময়ের মধ্যে বিসিক এলাকায় কোনো বিক্ষোভ ও আন্দোলন-সংগ্রাম হয়নি। শনিবার সকাল ৯টা থেকেও বিসিকে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে পাহারা বসায় টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃারা। এ সময় টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমনের নেতৃত্বে গাজী সালাহ উদ্দিন, আকবর হোসেন ফারুক, নুর-ই মোস্তফা খান, গাজী আমানসহ বিএিনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।