প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু টানেল, ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন


চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তা বিষয়ক ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি) সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও পুলিশের কয়েক ঘণ্টার এ যৌথ ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হয়। এতে টানেলের নিরাপত্তার দিকগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কিংবা অগ্নিকাণ্ডজনিত কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে কিভাবে তা মোকাবিলা ও উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করা যায়, মূলত সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। নিরাপত্তার এ ট্রায়াল রান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২৮ অক্টোবর দেশের ইতিহাসের প্রথম এই টানেল উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পরদিন থেকেই টানেলের ভেতর দিয়ে চলবে গাড়ি। উদ্বোধনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ট্রায়াল রান চালানো হয়েছে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্তে সড়কপথে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে যুক্ত করা হবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতির পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদীর তলদেশে টানেলের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন এটি উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যেহেতু টানেলে চলাচলের বিষয়টি একেবারেই নতুন, তাই এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যা হয় কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল। ট্রায়াল রানে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। একটির ভেতর দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী যানবাহন প্রবেশ করবে। অন্যটি দিয়ে চলবে চট্টগ্রাম শহরমুখী যানবাহন। দুটি টিউবেই নিরাপত্তা ট্রায়াল রান হয়েছে। গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কিভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা যায়, তা দেখা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ পরবর্তী মহড়া দেওয়া হয়েছে। ট্রায়াল রানে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটের ২৫ জন সদস্য, নৌবাহিনীর একটি ইউনিট, ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। এ সময় সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সেতু সচিব মঞ্জুরুল ইসলাম ও টানেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে এটা ছিল চূড়ান্ত মহড়া, যা সফলভাবে শেষ হয়েছে। টানেলের ভেতরে একটি ডামি গাড়িতে আগুন লাগে। ৩ মিনিটের মধ্যে তারা গিয়ে সেই আগুন নির্বাপণ করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। নৌবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিমও এতে অংশ নেয়। আবদুল মালেক আরও জানান, টানেলের ভেতরে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তা আনোয়ারা প্রান্তে অবস্থিত কন্ট্রোল রুমের মনিটরে সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে। তারপর প্রয়োজন অনুসারে টানেলে কর্মরত রেসকিউ টিম, মেইনটেন্যান্স টিম, ফায়ার ফাইটার টিম ও ফাস্ট এইড টিম অল্প সময়ের মধ্যে ওই স্থানে ছুটে যাবে। তারা গাড়ি ও যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করবে। টানেলের ভেতরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ফায়ার হাইপ্রেন্টসহ অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, ডামি গাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনার পরীক্ষামূলক উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে ট্রায়াল রানে। নৌবাহিনী কর্মকর্তা, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনের কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক।