ফাঁসির আসামিরা পালিয়ে যাওয়ায় ৩ কারারক্ষী বরখাস্ত


বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। এছাড়া অপর দুই কারারক্ষীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। জেল সুপার আনোয়ার হোসেন তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত নেন। বৃহস্পতিবার থেকে জেলা প্রশাসন ও ডিআইজি প্রিজনের গঠিত পৃথক কমিটি তদন্ত শুরু করবে। বগুড়া জেলা কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, দায়িত্ব অবহেলায় প্রধান কারারক্ষী দুলাল হোসেন, কারারক্ষী আবদুল মতিন ও কারারক্ষী আরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার হচ্ছে। এছাড়া কারারক্ষী ফরিদুল ইসলাম ও কারারক্ষী হোসেনুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। বগুড়া জেলা প্রশাসকের গঠিত ছয় সদস্যের এবং অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান সুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি বৃহস্পতিবার তদন্ত শুরু করবেন। এদিকে তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও দুজনকে শোকজ করার ব্যাপারে জানতে ফোন দিলে না ধরায় বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন এবং জেলার ফরিদুল ইসলাম রুবেলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শুনেছেন। পলাতক ও গ্রেফতার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিরা হলেন- কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিল খাঁর ছেলে আমির হামলা ওরফে আমির হোসেন (৩৮), বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ইসমাইল শেখ চাঁদ মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (২৮) এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট পুর্বপাড়ার বাসিন্দা ও বিএনপি সমর্থিত কাহালু পৌর মেয়র আবদুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১)। সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, মো. জাকারিয়া বগুড়ার কাহালুর চাঞ্চল্যকার শিশু নাইমকে হত্যা ও লাশ ভাটায় পুড়িয়ে ফেলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। এছাড়া নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও আমির হোসেন চারটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। বগুড়ার পুলিশ সুপার (পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন গ্রেফতার কয়েদিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা বাথরুমে থাকা বালতির লোহার হাতল সোজা করে সেটি দিয়ে এক মাস ধরে ছাদ ছিদ্র করেন। এর আগে কাপড় ও বিছানার চাদর জোড়া দিয়ে রশি বানিয়ে সেটি দেওয়ালে আটকানো হয়। এরপর এটার ওপর দাঁড়িয়ে তারা ছাদ ছিদ্র ও কনডেম সেল থেকে বেরিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, কয়েদিরা ছাদের যে জায়গাটি ছিদ্র করার জন্য বেছে নিয়েছিল সেটি বাথরুমের মধ্যে এবং বাইরে থেকে দেখা যায়না। কারারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতেই তারা ওই কর্নারের অংশটি বেছে নেয়। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান সুজা ও অন্যরা বলেন, বগুড়া জেলা কারাগার ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৪১ বছরের প্রাচীন কারাগার চুন-সুরকির গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত। ছাদে রড নেই। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি ছাদ ছিদ্র করে। বিছানার চাদর দিয়ে রশি বানিয়ে দেওয়াল বেয়ে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোর ৪.১০ মিনিটের দিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে স্ক্রু ড্রাইভার ও বালতির লোহার হাতল পাওয়া গেছে। এসব দিয়েই কয়েদিরা কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করেছিল।