বন্ধ মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে


মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যে নগরবাসীর চলাচলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব স্বস্তি এনে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাসে যেতে যেখানে আগে ব্যয় হতো ৩ ঘণ্টার বেশি সময়, সেই একই পথ মেট্রোরেলে পাড়ি দিতে নগরবাসীর সময় লাগে মাত্র ৩৫ মিনিট। এতে মানুষের যানজটে বসে থাকার মতো ভোগান্তিই শুধু কমেনি, সময়ও বেঁচেছে। এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। পরিতাপের বিষয়, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে দুষ্কৃতকারীরা নগরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে এ দুটিকেও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। আমরা বিস্ময় ও কষ্টের সঙ্গে লক্ষ করেছি, কীভাবে নগরবাসীকে সেবা প্রদান করা স্থাপনা দুটির ওপর দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। শহরের অত্যাধুনিক ও অতিপ্রয়োজনীয় দুটি স্থাপনায় নিন্দনীয় এ হামলা যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল, তা দেশপ্রেমিকমাত্রই স্বীকার করবেন। নগরবাসীর জীবনের কথা ভেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে তৈরি করা স্থাপনা দুটির কার্যক্রম সরকার নিরাপত্তার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। পরিমাপ করে জানা গেছে, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া এবং মিরপুর-১০ নম্বরে স্থাপিত স্টেশন দুটিতে ভাঙচুর চালিয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা মেরামতে অন্তত ১ বছর সময় লাগবে। কোনো সন্দেহ নেই, এ দীর্ঘ সময় স্টেশন দুটির মাধ্যমে নিয়মিত যারা চলাচল করতেন, তারা সেবাবঞ্চিত হবেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হওয়ায় এটিরও পুরো কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাক্ষর বহন করা স্থাপনা দুটিতে হামলার কারণে নগরবাসী শুধু সেবাবঞ্চিতই হয়নি, দেশও পিছিয়ে গেছে। সেবাগ্রহীতাদেরও স্বাভাবিকভাবেই পুনরায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সড়কে দীর্ঘ যানজটে বসে আবারও কাটিয়ে দিতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অপচয় হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা, রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আমরা স্থাপনা দুটিতে হামলার পেছনে যারাই জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একইসঙ্গে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থাপনা দুটির কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা যায় কিনা, সরকারকে তা ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। এতে করে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ কিছুটা হলেও ফিরে আসবে। পাশাপাশি সরকারও পুনরায় রাজস্ব আদায় শুরু করতে পারবে। ভুলে গেলে চলবে না, মেট্রোরেল হোক কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এসবই দেশের সম্পদ, জনগণই এর মালিক। সরকারের পাশাপাশি এর রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। নগরজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে সরকার আংশিক হলেও স্থাপনা দুটির কার্যক্রম দ্রুত চালু করার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে, এটাই প্রত্যাশা।