বন্যায় রংপুরে ৩১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত
অনলাইন নিউজ ডেক্স
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় বন্যায় ৩১৭ হেক্টর জমির ফসল ও ৫ কোটি টাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিরা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন রোপা আমন ধানের বীজতলা নিয়ে। বন্যায় রোপা আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বীজতলা প্রস্তুত করে ধান রোপণের সময় পেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শেরপুর ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কমতে শুরু করেছে পানি। তবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রংপুর ও পীরগাছা : রংপুর কৃষি, মৎস্য ও শিক্ষা অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বন্যায় রংপুর অঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী-এ পাঁচ জেলায় ২ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমির ফসল এখনো কমবেশি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এত ফসল পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১৭ হেক্টর জমির। যেসব ফসল ক্ষতি হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, রোপা আমনের বীজতলা, শাকসবজি, চিনাবাদাম, আউশ ধান, পাট, মরিচ ও তিল। ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। বন্যায় রংপুরের ওই পাঁচ জেলার ১২১ হেক্টর জমির ৬০৫টি পুকুরের ২০৫ টন মাছ ভেসে গেছে। এর বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকার অধিক হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এমন মৎস্যচাষির সংখ্যা খুবই কম।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রংপুর অঞ্চলের ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের অনেকগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত। আবার নদী ভাঙনের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নদীতে চলে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, এবারের বন্যায় ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। পাঁচ জেলায় ৩১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বীজতলার সংকট মোকাবিলার জন্য কাজ করা হচ্ছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কৃষক ফয়জার আলী জানিয়েছেন তার প্রায় ৫ বিঘা জমি চাষের বীজতলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কি করে তিনি জমিতে ধানের চারা রোপণ করবেন তা নিয়ে সংকটে পড়েছেন।
রংপুর মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে রংপুরে মাছের ক্ষতি কম হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে মৎস্যচাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কাউনিয়া উপজেলা মধুপুরের মৎস্যচাষি জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন তার পুকুরের মাছ বন্যায় ভেসে গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় নদীভাঙনের শিকার কিছু বিদ্যালয়ের স্থাপনা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। মোট ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতি হয়েছে।
পীরগাছায় তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি। অপরদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে পাঠদান থেকে। পানির কারণে চর দক্ষিণ গাবুড়া ও চর পূর্ব শিবদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটিতে পাঠদান একেবারেই বন্ধ। চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমে প্রায় ৭০০ মিটারের মধ্যে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে পানি আর পানি। তাই চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য স্পিড বোটের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শেরপুর : শেরপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। শেরপুর সদর উপজেলার ধলা ও গাজীরখামার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের নিুাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমনের বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি খেত নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। আমন ধানের বীজ সংগ্রহ করে আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন। ঢলের পানিতে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শেরপুর সদর উপজেলার ধলা, বাজিতখিলা ও গাজীরখামার ইউনিয়নের ৭৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা এবং ৩৫ হেক্টর জমির সবজি আংশিক ও সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পৃথক দুটি স্থানে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : ঘরর বেড়া ছাড়ি ছাড়ি (খসে খসে) পড়ি যার। মনে কয় (আশঙ্কা) আর মাথা গোঁজার ঠাঁই (অবলম্বন) রইতো (থাকবে) নায়। অতো বেশি দিন বন্যা দেখছি না। কোন হালত (অবস্থা) অইবো, কইতাম পারিয়ার না। ঘর মেরামত কাজ করে এভাবেই হতাশা ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ গিয়াস নগরের বাসিন্দা মনই মিয়া ও আসুক মিয়া।
বানভাসী এসব মানুষ জানান, সাময়িক বন্যা হলে প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যায় কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হলে ক্ষতিটাও বেশি হয়। বন্যা হলো সবাই ত্রাণ নিয়ে এলেন আর দিলেন। তাতে কোনো লাভ নেই। আমরা ত্রাণ চাই না, এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ চাই।
কুলাউড়া উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। ফলে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষ বেহাল। দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে ঘরবাড়ি বিনষ্ট হচ্ছে। টিন ও খড়ের বেড়ার ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে বন্যার পানি কমলেও ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।