বাড়ছে প্রকল্প অনুমোদন
অনলাইন নিউজ ডেক্স
নির্বাচনি অর্থবছর ঘিরে বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন। গত দুটি একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় ৩৪টি প্রকল্প। এসব বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২০ হাজার ৩১৮ কোটি ৪৫ লাখ, বৈদেশিক ঋণ থেকে ১৫ হাজার ৩৩৪ কোটি ৬৭ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৯৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া ২৫ কোটি টাকার নিচে পরিকল্পনামন্ত্রীর ক্ষমতাবলে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আরও ১৪টি প্রকল্প। পাইপলাইনে আরও শতাধিক প্রকল্প আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, ভোটার তুষ্টি এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পগুলোই গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত রেখে আরও বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। কিন্তু এটি চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়ার সময় এটা নয়। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত নয়। পাশাপাশি এসব প্রকল্প শেষ পর্যন্ত জনকল্যাণের চেয়ে অপচয়ের আশঙ্কাই থাকে বেশি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বুধবার বলেন, কয়েক মাস ধরে একনেক নিয়মিত না হওয়ায় প্রকল্পের জট তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ক্লিয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনি বছরে প্রকল্পের অনুমোদন বেশি হওয়া স্বাভাবিক। কেননা মন্ত্রী, এমপিদের এলাকার চাহিদা থাকে। এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প অনুমোদন করাতে হবে। তাই সবাই চাইবে তার এলাকার প্রকল্প অনুমোদন হোক। তবে এক্ষেত্রে ঢালাও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি ছোট ছোট প্রকল্প বেশি অনুমোদন দেওয়ার। নিয়মনীতি মেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপরই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরীর সঙ্গে। বুধবার তিনি বলেন, হঠাৎ করে এত প্রকল্প অনুমোদন এবং গ্রামীণ অবকাঠামোয় বিশেষ নজর দেওয়াটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বলা যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এসব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এজন্য পরে অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফলও পাওয়া যায় না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০ জুন অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। বৈদেশিক ঋণ ১১ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা টাকা ব্যয় করা হবে। এগুলোর মধ্যে গ্রামীণ উন্নয়নের প্রকল্পই বেশি।
অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর কয়েকটি হচ্ছে-সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ এবং নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-চার। রুরাল কানেকটিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি)। চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ। রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্প।
৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ ব্যয় করা হবে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-ফরিদপুর জেলাধীন মধুমতী নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে শহিদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প। বাগেরহাট জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নেত্রকোনা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। আরও আছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প (পঞ্চম সংশোধন), পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন এবং গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১-শেওলা-রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রকল্প। সাতক্ষীরা সড়ক সিটি ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ এবং নড়াইল জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন।
সূত্র জানায়, ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া ১১ এপ্রিল অনুমোদন পায় ১১টি এবং ৪ এপ্রিল অনুমোদন পেয়েছে ১১টি প্রকল্প। এভাবে প্রকল্প অনুমোদনের হার বাড়ছেই।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।