বিএনপির আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি আইনজীবী ফোরামের


বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া এবং ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর মিথ্যা মামলায় আটক দলের মহাসচিবসহ সব নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া বিরোধী নেতাকর্মীদের মিডিয়া ট্রায়াল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের ঢাকার একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে আইনজীবী ফোরাম। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে ক্রাকডাউনের কবলে বাংলাদেশ। বিরোধী দলের ওপর চলছে চরম নিপীড়ন। সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইচ চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, আব্দুল জব্বার ভুইয়া, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. কামাল হোসেন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৮ অক্টোবরের বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এর আগে ও পরে ৬১৩টি মামলার মাধ্যমে বিরোধীদলীয় ১৩,৩৮৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এ গ্রেফতার অভিযান এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার অনেক নেতাকর্মীকে রিমান্ডে এনে তথাকথিত ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ আদায় করে বিভিন্ন মিডিয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। যা মিডিয়া ট্রায়ালেরই নামান্তর। এ কাজের মাধ্যমে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারি দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। অথচ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ গত ২০১২, ২০১৫ এবং ২০১৯ সালের বিভিন্ন মামলায় রিমান্ড, গ্রেফতার ও পরবর্তী ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ না করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যা আইন শৃংখলাবাহিনী কর্তৃক অবশ্য পালনীয় বলে আমরা মনে করি। এছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনী কর্তৃক এই সমস্ত ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ দেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও বটে। আমরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব বে-আইনী ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রায় থানায়ই মামলা করা হয়। এর মধ্যে ২৯ অক্টোবরের পল্টন থানায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিবসহ মোট ১৬৪ জন নেতাকর্মীর নামে করা হয়। এতে অজ্ঞাতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। ইতোমধ্যেই আমরা অবগত হয়েছি, পল্টন থানায় ওই মামলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিএনপির অনেক দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমনকি হয়রানিমূলকভাবে মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। আইনজীবীদের জনপ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট মো. সানাউল্লাহ মিয়া সাড়ে তিন বছর আগে মারা গেছেন। গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় করা একটি মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের বেআইনি, হীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।