বিএসসির ঋণ জটিলতা


বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মতো সংস্থার প্রয়োজনে বিদেশি ঋণ নেওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে বিএসসির যে কোনো কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, সংস্থাটির ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটছে না। বুধবার খবরে প্রকাশ-বিএসসি কর্তৃপক্ষ বিদেশি বেসরকারি খাত থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য চুক্তি সই করেছে; কিন্তু এ চুক্তি সই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হয়নি। চুক্তিটি সই হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অন্যদের কাছ থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেবে। ঋণ গ্রহণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অনুমোদন ও প্রক্রিয়া অবলম্বন ছাড়াই ওই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে ৫৬৫ কোটি টাকা ব্লক করেছে বিএসসি। শিপিং করপোরেশনের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে এ টাকা ব্লক করতে ‘ক্যাশ এসক্রো অ্যাকাউন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামক চুক্তিও করেছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে পাশ কাটিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনায় সম্মতি ও অনুমোদন দিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জাহাজ নির্মাণের জন্য এআইএস মেরিন নামক যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিটি হয়েছে, তাদের এ ধরনের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এ কাজও তারা আগে করেনি। তারা বিএসসি বাদে বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঋণের জোগান দিয়েছে, এমন নজিরও নেই। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেই ঋণের টাকায় বিএসসির জন্য ৬টি কনটেইনার জাহাজ নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি সার্ভিস ফি বাবদ প্রকল্প ব্যয়ের ১.৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩.৯ মিলিয়ন ডলার নেবে। আমরা মনে করি, জাহাজ নির্মাণশিল্পে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিএসসিরও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেজন্য সব কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ঋণ আবেদনের ক্ষেত্রে অ্যাগ্রিমেন্ট ফর জেনারেল ইউজ এবং ক্যাশ এসক্রো অ্যাকাউন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের বিষয়টি উল্লেখ না করে এআইএস মেরিনের সঙ্গে শুধু নন-বাউন্ডিং এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষরের মাধ্যমে ছাড়পত্র আদায়ে বিএসসির এ প্রচেষ্টা অ্যালোকেশন অব বিজনেসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ঋণের ছাড়পত্রের বিষয়টি পরিষ্কার না করেই ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে ফেলার ঝুঁকি নেওয়াও বিএসসির উচিত হয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, এটাই প্রত্যাশা।