বেনজীরের স্ত্রী সন্তানরাও দুদকে এলেন না


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে সাড়া দেননি। একইভাবে দুদকের ডাকা সাড়া দেননি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও। আজ তাদের দুদক ডেকেছিল। অবৈধ সম্পদের অভিযোগ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার বেনজীরের স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যাননি। এর আগে গত ৯ জুন দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু আইনজীবীর মাধ্যমে আরও ১৫ দিন সময় চান বেনজীরপত্নী ও তার দুই কন্যা। এর আগে দুদকের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে তার অনুরোধে বেনজীরকে অতিরিক্ত ১৬ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। একই সঙ্গে বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন তলব করা হয়েছে। দুদকে তলবে হাজির হওয়ার আগের দিন অর্থ্যাৎ ৫ জুন, আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৬ দিনের সময় চান। এরপর ৯ জুন দুদকে উপস্থিত হতে ১৫ দিন সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন বেনজীর পরিবার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীর স্ত্রী ও তার দুই কন্যাকে ১৫ দিন অর্থাৎ ২৪ জুন পর্যন্ত সময় দেয় দুদক। ২১ জুন দুদকের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠান বেনজীর। দুদক সূত্র বলছে, চিঠিতে সংস্থাটির জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে আর সময় চাওয়া হয়নি। এখন দুদক আর বেনজীর পরিবারের কাছে সম্পদের বিবরণী চাইবে না। সংস্থাটির অনুসন্ধানে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের যে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে শিগগির মামলা করা হবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বেনজীরের লিখিত বক্তব্য আমলে নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হয় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের আবেদন আমলে নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ওই আদেশের ফলে পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবসমূহে শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না। আদালতের আদেশে দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদের বিও হিসাব রয়েছে আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের ব্রোকারেজ হাউজে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব আছে। বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ৬টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের আদেশ মোতাবেক ওই হিসাবগুলোর ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে। এর আগে গত ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয় করা সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে বেনজীরের বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।