বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য ৯৬ হাজার কোটি টাকা


প্রতি অর্থবছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তৈরির সময় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ধরা হয় বৈদেশিক সহায়তা লক্ষ্য। সেই ধারাবাহিকতা আগামী অর্থবছরেও থাকছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ ধরা হতে পারে ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক মূল এডিপির তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় বেশি ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সিরিজ বৈঠকের মাধ্যমে এই আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও চলছে কাটছাঁটের প্রক্রিয়া। আগামী রোববার বা সোমবার খসড়া বরাদ্দ চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেলেও ইআরডির দায়িত্বশীল কেউই কথা বলেননি। তারা বলেন, এখনও কিছুই বলা যাচ্ছে না। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যোজন-বিয়োজন চলবে। কাজেই এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বুধবার বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে সেটি অর্জনের সম্ভাবনা নেই, এটা বলা যাবে না। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। পাইপলাইনের দিকে তাকালে দেখা যায় বিশ্বব্যাংকের রুল অব থাম অনুযায়ী গড়ে একটি প্রকল্পের মেয়াদকাল ৫ বছর হলে প্রতি অর্থবছর ২০ শতাংশ করে অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পাইপলাইনের ১৪-১৫ শতাংশের বেশি খরচ হয় না। বিশ্বব্যাংকের রুল অব থাম ধরলে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী নয়। কিন্তু প্রতিবছর যে শিক্ষা নেওয়া কথা সেটি তো নেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ খরচের সক্ষমতা আছে সেটিই লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। অথবা যেসব কারণে প্রকল্পের গতি বাড়ানো বা অর্থ ব্যয় করা যায় না সেসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ বাজেটে থাকতে হবে। তাহলে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয় না। কিন্তু বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ উল্লেখ থাকে না। ইআরডির সূত্র জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য চার দিনের সিরিজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে বরাদ্দের ধারণা চাওয়া হয়। বৈঠকগুলোতে বিস্তারিত আলোচনার পরই প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরডির সচিব শাহারিয়ার কাদের সিদ্দিকী। এদিন বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগসহ ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নেয়। ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় দিনের বৈঠকে অংশ নেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগসহ ১৩টি এবং শেষ দিন ৪ মার্চ অংশ নেয় ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত এনইসি বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সংশোধিত এডিপিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ ছিল ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা, সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে এনে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে অর্থবছর শেষে খরচ হয়েছিল আরও কম, অর্থাৎ ৬৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। একই চিত্র অন্য বছরগুলোতেও। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা, সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ধরা হয় ৭২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে খরচ হয়েছিল ৬৭ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ৬৩ হাজার ১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি, সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ধরা হয় ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে খরচ হয়েছিল ৪৭ হাজার ৪৪ কোটি টাকা।