বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া নিয়ে দ্বিধা


সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। ক্ষমতার তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা দলীয় সুপারিশে অসংখ্য অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। গত রোববার এসব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এগুলো থানায় জমা দিতে বলা হয়। এর পর থেকে অস্ত্রধারী এসব নেতার অনেকেই থানায় যোগাযোগ করছেন। তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে অস্ত্র জমাও দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগই গ্রেফতারের ভয়ে অস্ত্র জমা দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। অন্যদিকে সব অস্ত্র ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব আগ্নেয়াস্ত্র জমা না হলে উদ্ধারে করণীয় কী হবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, দেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র নিয়েছেন তারা। পুলিশের গত বছরের একটি হিসাব অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৫০ হাজার ৩১০টি। ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৪৫ হাজার ২২৬টি। যার ১০ হাজার ২১৫টি রয়েছে রাজনীতিক ব্যক্তিদের নামে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ৭ হাজার ২১৫টি। বিএনপির ২ হাজার ৫৮৭টি এবং অন্যান্য দলের ব্যক্তিদের ৭৯টি। পুলিশ বলছে, বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের অনেকেই থানায় যোগাযোগ করে অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইছেন। তাদের অনেকেই অস্ত্র জমাও দিয়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তারা হয়তো অস্ত্র দিয়ে দেবেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের অস্ত্র জমা না হলে করণীয় কী হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন শুধু অস্ত্রগুলো জমা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বরের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন থানা এলাকাগুলোতে বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের হালনাগাদ হওয়া তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেক থানা ভবনে অগ্নিসংযোগের কারণে তালিকা পুড়ে গেছে সেগুলোও সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে অস্ত্র নেওয়া অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী রয়েছেন আত্মগোপনে। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্রধারীর মধ্যে রয়েছেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. নুনু মিয়া, বগুড়ার সান্তাহারের আওয়ামী লীগের কর্মী মাহমুদুর রহমান পিন্টু, চট্টগ্রামের আবুল হাসানাত মো. বেলাল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মোখলেছুর রহমান কামরান ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল। উত্তরাঞ্চলের এক আওয়ামী লীগ নেতা অস্ত্র জমা দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের সময় তার বাড়িতে হামলা হলে আত্মরক্ষায় তিনি দুটি গুলি ছোড়েন। এরপর এই ঘটনা জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় জিডি করতে পারেননি। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পর তিনি অস্ত্র জমা দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে-এমন শঙ্কা থেকে এখনো অস্ত্র জমা দিতে যাননি। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করার পরও একাধিক ব্যক্তিরা এখনো অস্ত্র জমা দেননি। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের থানায় এখন পর্যন্ত ১০টি অস্ত্র জমা হয়েছে। যারা অস্ত্র জমা দিতে চান তারা যে কোনো সময় থানায় এসে জিডি করে অস্ত্র জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের অস্ত্রগুলো গ্রহণ করা। দেশের সব থানায় এখন এসব অস্ত্র নেওয়া হচ্ছে। যারা আত্মগোপনে রয়েছেন এবং অস্ত্র জমা দেবেন না তাদের অস্ত্র উদ্ধারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে-সে বিষয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।