‘ভাঙ্গায় বসে ছবি আদান-প্রদান করে কালীগঞ্জ এসে সান্ত্বনা দেয় মিন্টু’


ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিতে আদালতকে মিন্টু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমপি মনোনয়ন চাওয়াই আমার অপরাধ।’ তিনি খুনের দায় শিকার করে জবানবন্দিও দেননি। এ অবস্থায় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বুধবার ঝিনাইদহে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অভিযোগ করেন, মিন্টুর সহযোগীরা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বসে তার নিহত বাবার ছবি আদান-প্রদান করেছেন। পরে কালীগঞ্জে গিয়ে তারা ডরিনকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। আরও অভিযোগ করেন, আমাকে এতিম করে দিয়ে, মিন্টু আমাদের বাসায় এসে বলে ‘আমি এতিমের সঙ্গে আছি।’ গত ১১ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মিন্টুকে ডিবি পুলিশ আটক করে। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আটকের পর ১৩ জুন মিন্টুকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে মিন্টু বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমপি মনোনয়ন চাওয়াই আমার অপরাধ। সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ডিবি যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের সবাই আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু মিন্টু। তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানায় ডিবি। এর আগে মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গত ৬ জুন রাতে আটক করে ডিবি। ৯ জুন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড চলাকালীন আনার হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন বাবু। তারপর আদালত বাবুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বাবুর জবানবন্দিতেই আনার হত্যার নেপথ্যে মিন্টুর নাম আসে। এর আগে গত ২৩ মে সৈয়দ আমানুল­াহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্তি রহমানকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তারা তিনজনই ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন। উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত ১২ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন বাংলাদেশে গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সেলেস্তি, বাবু ও মিন্টু।