ভূমিদস্যুদের সুবিধা দিচ্ছেন বাবুগঞ্জের ওসি-এসআই
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই-এর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে মামলা ভিন্নখাতে নেওয়াসহ তাদের বেআইনি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী সায়েস্তাবাদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী। এসব সমস্যার প্রতিকার পেতে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হায়াৎসার মৌজার আরএস ১ নম্বর খতিয়ানের ৪৬ দশমিক ৫৬ একর জমি রেকর্ডীয় ও দখলীয় মালিক মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী থাকাবস্থায় কয়েক যুগ আগে আড়িয়ালখাঁ নদীতে ভেঙে যায়। পরে চর জেগে উঠলে ভুলবশত সেই জমি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।
ওই জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য ২০১৪ সালে বরিশাল আদালতে সায়েস্তাবাদ ওয়াকফ এস্টেট মামলা করলে ২০১৭ সালে সেই জমি ওয়াকফ এস্টেট প্রাপ্ত হয়। হঠাৎ করে বরিশাল সদর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ থানার মাজেদ আকন, মালেক বয়াতি, রাজু আকন, সালাম বয়াতিসহ অন্য আসামিরা ৪৬ একর জমির আমন ধান কেটে নেয়।
এ ঘটনায় ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী ১৫ ডিসেম্বর বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বাবুগঞ্জ উপজেলার সাদেক খাঁ গ্রামের আব্দুল মাজেদ আকনকে প্রধান এবং ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত ১৮ ডিসেম্বর ওই ৪৬ একর জমির ধান কেটে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে। সর্বশেষ ওই ঘটনায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে মামলা করলে আদালত ওসি ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর জুনে বাদীর বর্গাচাষিরা ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করতে গেলে তাদের হুমকিধমকি দেওয়া হয়। পরে ৩ জুলাই চাষাবাদকালে কালিকাপুরের সামছু খাঁ, সুমন ঘরামী, ভবানীপুরের জুলহাস কবিরাজ, কামারপাড়ার আবু চাপরাশি, হায়াতসার ফরিদ রাঢ়ী, মিজান হাওলাদারসহ ১৫ থেকে ২০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাষিদের মারধর করে এবং পাওয়ার টিলার, এক ব্যারেল ডিজেল, নৌকা, ধানের গোছাসহ চাষি লুৎফর নলী, হারুন শরীফ ও আলামিন মোল্লাকে ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বর্ঘাচাষি মো. রুবেল সরদার ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতা চান। এ সময় বাবুগঞ্জ থানার এসআই মনিরুজ্জামান তালুকদার কুমারিয়ারপিঠ থেকে নিয়ে যাওয়া চাষিদের উদ্ধার করে এবং পাওয়ার টিলারসহ অন্যান্য মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য ভূমিদস্যুদের নির্দেশ দেন। তবে তারা মালামাল ফেরত দেয়নি। এ ঘটনায় ৫ জুলাই মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী কাউনিয়া থানায় এজাহার দায়ের করলে তা রুজু হয় ২০ জুলাই।
অন্যদিকে ভূমিদস্যুরা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে মামলার বাদী ও চাষিদের হয়রানি করতে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করে। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এসআই মনিরুজ্জামানকে তদন্তভার দেওয়া হয়।
এদিকে মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরীর চাষিদের পাওয়ার টিলারসহ অন্যান্য মালামাল ফেরত দেওয়া হয়নি। পরে কাউনিয়া থানায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসআই মোস্তাফিজুর রহমান নৌকা উদ্ধার করেন। এসব ঘটনায় বাবুগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই মনিরুজ্জামান আসামিদের পক্ষাবলম্বন করে ভূমিদস্যুদের নানা সুযোগ দিতে থাকে।
এ ঘটনায় মোতাওয়াল্লি সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাবুগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই মনির ভূমিদস্যুদের অবৈধ ও বেআইনি সুবিধা দিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের মামলা ভিন্নখাতে নিচ্ছে।
ওসি উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, এসপি স্যারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার খবর জানা নেই। বাদীর সঙ্গে আমার কখনো দেখা বা কথা হয়নি। তাই তাকে আমি চিনিও না। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, এই অভিযোগের বিষয়ে বাবুগঞ্জ সার্কেল এসপিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।