নতুন বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবার বাংলাদেশকে ভূ-অর্থনৈতিক চাপে পড়তে হবে। ইতোমধ্যেই এ চাপ সীমিত আকারে আসা শুরু করেছে। আগামী দিনে এ চাপ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও বাড়তে পারে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণেই এ ধরনের চাপ বাড়বে। এ চাপ মোকাবিলা করাই হবে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এতে সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রপ্তানিতে। ফলে রিজার্ভে চাপ আরও বাড়বে। ডলার বাজারে অস্থিরতা থাকবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে।
একই সঙ্গে দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি আরও কঠোর করতে হবে। সুদের হার আরও বাড়াতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে ডলারের দাম বাড়বে। ফলে শিল্পের খরচ বাড়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এসব মিলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
তবে আশার কথা, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা মার্চ পর্যন্ত কমতে পারে। বছরজুড়ে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। তবে এপ্রিল থেকে আবার বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, চিনি, জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়ছে। এগুলোর প্রভাবে দেশের বাজারেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে। রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে বাড়তে পারে অস্থিরতা।
বাংলাদেশ ব্যাংক, আইএমএফ ও আন্তর্জাতিক ঋণমান যাছাইকারী সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্প্রতি এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা চাচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনকে তারা অংশগ্রহণমূলক মনে করছে না। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার ক্ষুন্ন করার ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচনের পর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের মনোভাবের কারণে তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র আগে রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষে ছিল। এখন নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। রেমিট্যান্স কমেছে ৪১ শতাংশ। একক দেশ হিসাবে সবচেয়ে রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে আয় কমেছে ৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমেছে ৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোয়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে রপ্তানি কমেছে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে। বিনিয়োগ কমেছে বৈশ্বিক মন্দায়। বাংলাদেশের আমদানি কমেছে ডলার সংকটের কারণে।
সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এ প্রথমবার ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত হচ্ছে। এ দুটি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসব দেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমদানির ৭২ শতাংশই আসছে ভারত ও চীন থেকে। রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসছে ওইসব অঞ্চল থেকে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগই আসছে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে। আর এগুলো খরচ হচ্ছে বেশি চীন ও ভারতে। আয় হলে খরচ করা যাবে। আয় না হলে খরচ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, অর্থনীতিতে এখন দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। একটি হলো চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানো, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ- এগুলোয় নিয়ন্ত্রণ আনা কঠিন হবে। কারণ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ানো সহজ হবে না। এটি না বাড়লে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভে হাত দিতে হবে। তখন রিজার্ভের ক্ষয় বাড়বে। ডলারের দামও বাড়বে। তখন মূল্যস্ফীতির হার উসকে যাবে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। দেশের বিদ্যমান সংকটের মধ্যে আর কোনোভাবেই ডলারের দাম বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। ডলারের কারণেই অর্থনীতির সব খাত আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যদি ভ‚রাজনৈতিক কারণে কোনো বিধিনিষেধ চলে আসে, তাহলে বড় সমস্যা হবে। ওই ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
নতুন বছরে আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন একটি নতুন খড়্গ হিসাবে দেখা দেবে। কারণ, আগের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও শর্ত শিথিল করে সংস্থাটি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করেছে। তৃতীয় কিস্তি জুনে এবং চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বরে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ঋণের কঠিন কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির মাধ্যমে টাকার প্রবাহে আরও রাশ টেনে ধরা, সুদের হার আরও বাড়ানো, ডলারের বিনিময় হার পুরো মাত্রায় বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং রাজস্ব আয় বাড়ানো। এসব পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। তবে দীর্ঘ মেয়াদে কিছুটা ইতিবাচক হতে পারে। টাকার প্রবাহ কমানোর কারণে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। ফলে উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রায় দুই বছর ডলার সংকট চলছে। এতে বাণিজ্যিক আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আমদানিনির্ভর শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা উপকরণ, শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য, উৎপাদিত পণ্য, আবশ্যকীয় পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ (বিপিসি) অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে নতুন করে এসব পণ্যের জোগান কমে গেছে। এসব কারণে শিল্পের উৎপাদন এমনিতেই নিæমুখী। চলতি বছরে এ খাতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো এবং সুদের হার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে ঋণের প্রবাহ যেমন কমবে, তেমনই খরচ বাড়বে। এতে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আইএমএফ এ নীতিকে আরও কঠোর করার ও চলমান রাখার পরামর্শ দিয়েছে। ফলে আগামী বছরও এসব নীতি অনুসরণ করার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে। এতে নতুন শিল্প ব্যবসা কমে যাবে। ফলে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদিও আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে কর্মসংস্থান বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হলেও উৎপাদন খাতে ঋণের জোগান বাড়ানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে বড় সংস্কার আনতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। তা না হলে স্বল্প ও মধ্য-আয়ের মানুষের ভোগান্তি কমবে না।
তিনি আরও বলেন, ভূরাজনৈতিক কারণে অর্থনীতিতে কিছু শঙ্কা আছে। এসব শঙ্কা মোকাবিলা করার জন্য সংস্কার চলমান রাখতে হবে। তাহলে ভূরাজনৈতিক চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করতে চলতি বছর বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ আরও বাড়াতে হবে। কিন্তু রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে আয় করা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে আমদানি ও বৈদেশিক ঋণের দায় মিটিয়ে ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে না। ফলে রিজার্ভে ডলার নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ প্রবণতা চলছে। চলতি বছরও যে ব্যয় মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ডলার থাকবে, এমন আভাস মিলছে না। ফলে এ বছরও রিজার্ভে ডলার যোগ করা কঠিন হবে। এতে রিজার্ভ বাড়ানোও চ্যালেঞ্জিং হবে। উলটো রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে জ্বালানি উপকরণসহ আবশ্যকীয় পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে রিজার্ভের ক্ষয় বাড়বে। কিন্তু আইএমএফ বলেছে কোনো ক্রমেই রিজার্ভের আর ক্ষয় করা যাবে না।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতিতে এখন যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো থাকবে। এগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে। ভূরাজনৈতিক কারণে বড় ধাক্কা না এলে গত বছরের চেয়ে নতুন বছরে অর্থনীতি ভালো হবে। বৈশ্বিকভাবে সুদের হার আর বাড়বে না, বরং কমবে, পণ্যের দামও কমবে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সাল ভালো যাবে। এর ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়বে। তবে ভঙ্গুর ব্যাংক খাতের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। ডলারের দামে যে পদ্ধতি আছে, সেটি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। পণ্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ-এর শর্তে ডলারের বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করতে হবে। এতে ডলারের দাম আরও বাড়বে। তখন টাকার মান কমে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। এতে স্বল্প ও মধ্য-আয়ের মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
বিদায়ি বছরের শেষদিকে ডলার বাজারে নতুন অস্থিরতা যোগ হয়েছে। বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অনেক শিথিল। কারণ, নির্ধারিত দরে ব্যাংকে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে না। ১২ থেকে ১৬ টাকা বেশি দামে ডলার লেনদেন হচ্ছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার দিকেই হাঁটছে।
মূল্যস্ফীতির হার এখনো সাড়ে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত আগস্ট থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ডাবল ডিজিটের ওপরে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমার কারণে চলতি বছর এ হার কিছুটা কমে আসবে, পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আইএমএফ-এর শর্তে মার্চ থেকে সরকার জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে। তখন আবার মূল্যস্ফীতির হার উসকে যাবে। চলতি বছরেও মূল্যস্ফীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ব্যাংক খাতে বিদায়ি বছরে মিশ্র প্রবণতা ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছর থেকে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ছাড় ওঠে যাচ্ছে। এদিকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বৈশ্বিক মন্দা ও ভূরাজনৈতিক চাপ মিলে উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা কমে গিয়ে ঋণ আদায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। বিদায়ি বছরেও স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। নতুন বছরে এ চাপ আরও বাড়বে। কারণ, আগে স্থগিত করা ঋণ এবার পরিশোধ করতে হবে। চলতি বছরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের স্থিতি রয়েছে দেড় হাজার কোটি ডলার। এর প্রায় পুরোটাই পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির কিছু ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব ঋণ জুনের পর পরিশোধের সময় এলে রিজার্ভে চাপ আরও বাড়বে। সব মিলে এ বছরও রিজার্ভ ও ডলারের বাজারে স্বস্তির আভাস মিলছে না।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।