ভোক্তাপিছু কম ব্যয় করে বাংলাদেশ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে সরকারিভাবে ভোক্তাপিছু সবচেয়ে কম অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশই ভোক্তাপিছু সরকারিভাবে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আহরণের হিসাবেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।
তবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়া শ্রীলংকাও বাংলাদেশের চেয়ে মাথাপিছু সরকারি ব্যয় বেশি। অথচ দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে রাজস্ব আহরণ করে কম। দেশে বিনিয়োগ সক্ষমতার অভাবে সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ খুবই কম। বেসরকারি খাতে ঋণ কিছুটা বেশি হলেও অনেক দেশের চেয়ে কম।
সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক ঋণের তথ্যভান্ডারে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওইসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
আইএমএফ-এর অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ কম ঝুঁকিতে আছে। কারণ, দেশটির বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলকভাবে অনেক দেশের চেয়ে কম।
জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ঋণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর আগে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ১৯৭৫ সালে জিডিপির অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
১৯৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ১৯৮৫ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১৯৯০ সালে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০০০ সালে আরও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ শতাংশে। ২০০৫ সালে ২৪ দশমিক ২৩ এবং ২০১০ সালে ৩৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়। অর্থাৎ, ১০ বছরে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ জিডিপির অনুপাতে দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
২০১৫ সালে তা আরও বেড়ে ৩৬ দশমিক ৩২ এবং ২০২০ সালে ৩৮ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এ খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেনি। বরং বেড়েছে। তবে জিডিপির আকার বাড়ায় ঋণের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
পাকিস্তান ছাড়া অন্যদেশগুলোর এ খাতে বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ভারতে ৮৭ দশমিক ৯১, নেপালে ৯৬ দশমিক ৯১, থাইল্যান্ডে ১৭৪ দশমিক ২৫, মালদ্বীপে ৩০ দশমিক ৫২ এবং পাকিস্তানে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সরকারের বৈদেশিক ঋণ ১৯৭৫ সালে ছিল জিডিপির অনুপাতে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ১৯৮০ সালে ১৬ দশমিক ৩০, ১৯৮৫ সালে ২৪ দশমিক ২৩ এবং ১৯৯০ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশে। এরপর থেকে অল্প করে সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩৯ দশমিক ০৯ শতাংশ হয়।
এ খাতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ৫৫ দশমিক ৪৫, নেপালের ৪৩ দশমিক ৮৩, পাকিস্তানের ৭৫ দশমিক ৭৫, শ্রীলংকার ১১৭ দশমিক ৬, ভুটানের ১২৪ দশমিক ৭৯, মালদ্বীপের ১১৪ দশমিক ৯৪, মিয়ানমারের ৬৩ দশমিক ৯০ এবং থাইল্যান্ডের ৫৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈদেশিক ঋণ অন্যদেশের তুলনায় কম হলেও রিজার্ভ নিয়ে বেশ চাপে আছে বাংলাদেশ। অন্য দেশগুলো বেশি ঋণ নিলেও রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশের মতো অতটা চাপে নেই।
এর কারণ হিসাবে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের নেওয়া বৈদেশিক ঋণের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বা দেশে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যে কারণে বৈদেশিক ঋণ থেকে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে না। এমনকি স্থানীয় মুদ্রাও আয় হচ্ছে না। ওইসব ঋণ এখন শোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বড় চাপে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা বেশি চাপে পড়েছিল। তারা এ চাপ কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন পাকিস্তান বেশ চাপে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিনিয়োগ সক্ষমতা ও মানসম্পন্ন খরচের সক্ষমতা কম বলে বেশি ঋণ গ্রহণ করে তা অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারছে না।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে রয়েছে। একইভাবে পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব ব্যয়েও। জিডিপির তুলনায় রাজস্ব অনুপাত ১৯৯০ সালে ছিল ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে রাজস্ব আয় কমেছে। অথচ জিডিপির হিসাবে রাজস্ব আয় বাড়ার কথা ছিল; কিন্তু বাড়েনি।
জিডিপির হিসাবে রাজস্ব আয়ের অনুপাত থাইল্যান্ডে ২০ দশমিক ৪২, ভুটানে ২৭ দশমিক ২৯, ভারতে ১৯ দশমিক ২০, কুয়েতে ৫২ দশমিক ২৪, মালদ্বীপে ২৯ দশমিক ৭১, মিয়ানমারে ১৩ দশমিক ২৫, নেপালে ২৩ দশমিক ৪৮, পাকিস্তানে ১২ দশমিক ৬ এবং শ্রীলংকায় ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। রাজস্ব আয়ের অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে শ্রীলংকা। তবে শ্রীলংকায় সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এমনটি হয়েছে।
বাংলাদেশের জিডিপির হিসাবে মাথাপিছু ব্যয় ১৯৯০ সালে ছিল ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত বছর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশে। ভুটানে জিডিপির হিসাবে মাথাপিছু ব্যয় ৩৪ দশমিক ৪৮, ভারতে ২৮ দশমিক ৮, কুয়েতে ৪০ দশমিক ৬৮, মালদ্বীপে ৪১ দশমিক ৭৩, মিয়ানমারে ১৮ দশমিক ৪৪, নেপালে ২৬ দশমিক ৭৮, পাকিস্তানে ১৯ দশমিক ৮৭ এবং শ্রীলংকায় ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রীলংকা বাংলাদেশের চেয়ে কম রাজস্ব আয় করেও বেশি অর্থ ব্যয় করে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।