মমতার চোটে ‘পেছন থেকে ধাক্কা’ নিয়েই জোর বিতর্ক


কিভাবে কপালে গুরুতর আঘাত লাগল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তা নিয়ে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য-রাজনীতি। ইতোমধ্যেই ‘পেছন থেকে ধাক্কা’ নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’দফায় বক্তব্য নিয়ে জোর বির্তক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার চোটের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএমের তরফে বলা হয়েছিল ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড’। অর্থাৎ পেছন থেকে ধাক্কা; যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চর্চা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে কিভাবে ধাক্কা? তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে ফের এসএসকেএমের তরফে ডা. মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘পেছন থেকে ধাক্কার অর্থ এই নয় যে, কেউ শারীরিক ধাক্কা মেরেছে; এর অর্থ মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় অনুভব করেছিলেন কেউ যেন তাকে ধাক্কা মেরেছেন; কিন্তু সত্যিকারে কেউ ধাক্কা মেরেছে বলে তিনি বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ পেছন থেকে ধাক্কা মেরেছে বলে আমি বলতে চাইনি, আমার কথার কেউ কেউ অপব্যাখ্যা করেছে।’ কলকাতার তৃণমূল ভবনে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য শিল্পমন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড’ শব্দের ভুল ব্যখ্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টার মেডিকেল টার্ম হচ্ছে ‘সিনকোপ’। অনেক সময় হঠাৎ করে মূর্ছা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে কেউ ধাক্কা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শরীরের মধ্যে আমচকা অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই সময় কেউ পড়ে যেতেই পারে। বয়স বেশি হওয়া মানুষের মস্তিস্কে অক্সিজেন কমলে এমন ঘটতে পারে।’ শিল্পমন্ত্রী ডা. শশীর পাঁজার বক্তব্য অনুযায়ী, সেরকমই কোনো কারণে পড়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার জেরে কপালে চোট। এর সঙ্গে কারো পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল- এমনটাই খবর। সূত্রের খবর, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিল লালবাজারের বিশেষ টিম। সায়েন্টিফিক উইং, ফরেন্সিক উইং, ফটোগ্রাফি সেকশন থাকছে ওই দলে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি যারা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সবার বয়ান রেকর্ড করবে। একই সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখবেন তারা। কালীঘাট থানার সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত করবে লালবাজার। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার কালীঘাটের বাড়িতে আচমকাই কপালে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কপালে তিনটি ও নাকে একটি সেলাইয়ের পর রাতেই বাড়ি ফিরে যান। তবে এখনো চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই রয়েছেন তিনি। শুক্রবারও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে দুদফায় পরীক্ষা করে মমতাকে দেখে এসেছেন পিজির ডা. শুভাশীষ ঘোষ। বাড়িতে পড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মাথায় চোট লাগার খবর পাওয়ামাত্রই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন। ১৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। মোদির বার্তা প্রসঙ্গে মমতা এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন- ‘আপনার প্রার্থনা ও শুভকামনার জন্য কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি। ধন্যবাদ।’ মমতার অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধীসহ রাজনীতির বিশিষ্টজনরা। আহত তৃণমূল নেত্রীর আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস এমপি শশী থারুর, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। দ্রুত আরোগ্য কামনায় বার্তা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।