মহাসমাবেশ করতে ডিএমপি কমিশনারকে বিএনপির চিঠি


ঢাকার নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার (২৮ জুলাই) মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ চিঠি দেওয়া হয়। নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-যেকোনো একটি স্থানে দলটি মহাসমাবেশ করতে চায় বলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র উদ্যোগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার এর পরিবর্তে ২৮ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশের বিষয়টি ডিএমপি কমিশনাকে অবহিত করা হলো বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এরআগে সোমবার নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছিল দলটি। তবে মহাসমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে বুধবার ফের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হলো। এদিকে শুক্রবার রাত ৯টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ করবে। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশকে শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংযত থেকে কোনো উসকানির মধ্যে পা না দিয়ে মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। মহাসমাবেশের জন্য বিএনপি নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল। তবে তাদের গোলাপবাগ মাঠে যাওয়ার পরামর্শ দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই দুই জায়গায় অনুমতি না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বিকালে বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, অনির্বাচিত ও অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, গুম, খুন, অত্যাচার নিপীড়নের শিকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জনগণের রক্তার্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আজ এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ দেশের সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। আমাদের যে যুগপৎ আন্দোলন চলছে সেখানে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসহ বাইরের বেশ কয়েকটি দলও তাদের মতো করে এ মহাসমাবেশের ঘোষণা করে। ‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা গত ২৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশকে জানাই। তারা আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের আপত্তি এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে জনদুর্ভোগের অজুহাতে সমাবেশ অনুষ্ঠানে আপত্তি জানায়। যদিও ইতোপূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তারপরও পুলিশ তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। আমাদের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সমাবেশের অধিকারে আপত্তি জানিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। সরকার ও সরকারদলীয় বিভিন্ন বাহিনীর নানা উসকানি এমনকি গত এক বছরে ২০ জন নেতাকর্মীর হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হওয়ার পরও সীমাহীন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছি। এমনকি এ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হোটেল এবং সারা দেশে নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা আশা করি, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবারের এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত যেকোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃতপক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসেবেই দেখবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়ার প্রমুখ।