মাংসের কোষ পচলে মিলবে না ডিএনএ


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহের মাংসের টুকরা পচে গেলে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) প্রোফাইলিং মিলবে না। সেক্ষেত্রে নানা ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিএনএ পরীক্ষার সময় উদ্ধারকৃত খণ্ডিত মাংস টুকরোগুলোর কোষ জীবিত থাকতে হবে। অন্যথায় এতে ফল পাওয়া যাবে না। এদিকে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার মাংস টুকরোর ফরেনসিক ডিএনএ প্রতিবেদন এখনও ভারত থেকে দেশে এসে পৌঁছায়নি। প্রতিবেদনটি ডিবি পুলিশের হাতে এলেই এমপি আনারের মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা ভারত যাবেন। আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় খুনিরা। হত্যাকাণ্ডের ১৬তম দিনে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের কিছু টুকরো উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। সেই মাংসের ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের পর পরিবারের সদস্যদের ডিএনএর সঙ্গে মিলে গেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে উদ্ধার মাংস এমপি আনারের। জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, যেহেতু ১৬ দিন অতিবাহিত হয়েছে সেহেতু মাংস পচে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে কোষগুলো পচে গেলে ডিএনএ নমুনা পাওয়া যাবে না। তবে সায়েন্টিফিক্যালি যদি মাংসের একটি কোষও জীবিত থাকে তাহলে সেখান থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, কোষ জীবিত থাকার বিষয়টি নির্ভর করে মাংসখণ্ড কোন কন্ডিশনে ছিল তার ওপর। এদিকে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস খণ্ডের ফরেনসিক ডিএনএ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও এমপি আনারের পরিবার। ফরেনসিক ডিএনএ প্রতিবেদন ভারত থেকে ডিবি পুলিশের হাতে এলেই এমপি আনারের মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা ভারত যাবেন। ইতোমধ্যে তারা ভারতের ভিসাও সংগ্রহ করেছেন। ডিবির সহায়তায় তারা ভারতে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেবেন বলে জানিয়েছেন। এমপি আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বৃহস্পতিবার বলেন, ডিবি আমাদের জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া মরদেহের খণ্ডিত অংশের ফরেনসিক রিপোর্ট তাদের কাছে আসবে, এরপরই ডিবির প্রতিনিধির সঙ্গে ডিএনএ নমুনা দিতে এমপি স্যারের মেয়েসহ আমরা ভারত যাব। এখনো রিপোর্ট আসেনি বলে জানিয়েছে ডিবি। এমপি আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোস্তাফিজ ও ফয়সাল এখনো ডিবির জালে ধরা পড়েনি। কলকাতায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা দুজন একসঙ্গে বৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেফতারে ডিবি লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২৪ মে পর্যন্ত তারা ঢাকাতেই অবস্থান করে। এর পরে সীমান্তবর্তী তিনটি জেলা দিয়ে অবৈধপথে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে তারা। ডিবির ধারণা তারা বাংলাদেশেই অবস্থান করছে। এমপি আনার অপহরণ মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিএমপির ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ বলেন, এমপি আনার হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার তিনজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এমপি আনার হত্যার আসামিদের টিআই প্যারেড করানো হবে : এমপি আনার হত্যায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ তিনজন ও কলকাতার সিআইডি একজনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া নেপালেও একজন গ্রেফতার আছে। ডিবি পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সব আসামিকে টিআই (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন) প্যারেড করানো হবে। অর্থাৎ আসামি শনাক্তকরণ পরীক্ষা হবে। এজন্য ভারত ও নেপালের পুলিশ গ্রেফতার আসামিদের চেহারা গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেনি। টিআই প্যারেডে মূলত কোনো আসামির স্বীকারোক্তির সঙ্গে গ্রেফতার অন্যান্য আসামির চেহারার মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত একাধিক আসামি একত্রে কোনো অপরাধ করলে তাদের ক্ষেত্রে টিআই প্যারেড করানো হয়। সূত্রে জানা গেছে, টিআই পরীক্ষার উদ্যোগ নেবে মূলত ভারতীয় পুলিশ। এজন্য বিভিন্ন দেশে গ্রেফতারকৃত আনার হত্যার আসামিদের একত্র করার প্রয়োজন হবে। ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত আটজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া আরও তিনজনের নাম এসেছে, যারা হত্যকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। তবে আর্থিক লেনদেনে তারা ব্যবহৃত হতে পারে বলে ডিবির সন্দেহ। নতুন করে নাম আসাদের জিজ্ঞাসাবাদ : আনার হত্যায় ব্যবহৃত অর্থ লেনদেনের সম্ভাব্য ব্যাংক হিসাবের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এ তথ্যের ভিত্তিতে আনার হত্যায় নতুন করে আরও ৩ জনকে তদন্তের আওতায় এনেছে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন, আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী চেলছি চেরী ওরফে আরিয়া (২১), শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী জামাল হোসেন (৫২) ও শাহীনের ঘনিষ্ঠ তাজ মোহাম্মদ খান (৬০)। এই তিনজনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে শাহীন টাকা লেনদেন করেছে বলে ধারণা ডিবির। ফলে আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিবি এই তিনজনসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের অর্থ লেনদেনের তথ্য জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) কাছে।