মানবাধিকার নিয়ে ইইউর উদ্বেগ


জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজসহ কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। গত সোমবার ছয় দিনের সফরে ঢাকায় আসার পর থেকে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বুধবার এসব বৈঠক প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ইমন গিলমোর বলেন, এটি স্বাধীন থাকা অত্যন্ত জরুরি, যাতে কোনো নাগরিক মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হলে সেখানে যেতে পারেন। পাশাপাশি এমন কমিশন থাকা প্রয়োজন, যারা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে অবহিত করতে পারবেন। তার এ বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের গুরুত্ব উঠে এসেছে। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থেও মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি জড়িত। ইমন গিলমোর স্পষ্টই বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বাংলাদেশ যে জিএসপি সুবিধা পায়, মানবাধিকারের বিষয়গুলো এ সম্পর্কের মূলে অবস্থান করে। কারণ সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত হতে চান, তারা এমন দেশে বিনিয়োগ করছেন যারা মানবাধিকারের জন্যও ভালো, নাগরিকদের জন্যও ভালো। আর নির্বাচনের বিষয়ে প্রাক ও পরবর্তী নির্বাচনি পরিবেশ, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা, রাজনৈতিক বিতর্কের অবস্থা, নির্বাচন প্রক্রিয়া ইত্যাদিও দেখা হয় বলে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এটা ঠিক, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কিংবা বিচারহীনতার নজিরও আছে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর একেবারেই বিচার হয় না, এক বাক্যে তা বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক হয়রানিও ঘটেছে এবং ঘটছে। তবে এ আইনটি পাশের পর থেকেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা ও প্রতিবাদ দেখা দেয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তা সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বিধান থাকলেও তা যুগোপযোগী। আমাদের আইনপ্রণেতারাও আরও গবেষণা করে আইনটি সময়োপযোগী করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, মানবাধিকারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি যেমন বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেমনি নষ্টও করতে পারে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও বিচার সংস্কৃতি নিরূপণের অন্যতম মাধ্যম এটি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়টি তো আছেই, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট থাকবে-এটাই প্রত্যাশা।