‘মা আমাকে বাঁচাও, এরা মেরে ফেলবে’ জিম্মি যুবকের আকুতি


রাজশাহীর যুবক ওয়াসিম আলী (৩২)। তাকে লিবিয়ায় অপহরণের পর জিম্মি করে পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মায়ের কাছে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে ওয়াসিম বলেন- ’মা তোমরা আমাকে বাঁচাও, এরা মেরে ফেলবে।’ ওয়াসিম রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সায়বাড় গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে। ছেলেকে ফেরত চেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওয়াসিমের মা পেমালা বেগম। তার ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের জন্য সরকারের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসিমের মামা জলিলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছেলেকে উদ্ধারের জন্য ওয়াসিমের মা জমি বিক্রি করে দালালদের ইতোমধ্যে ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। এরপরও অপহরণকারীরা ওয়াসিমকে মুক্তি দেয়নি। উপায়ান্তর না দেখে ২৬ জুন রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজের অধীন লিগ্যাল সেলে একটি লিখিত অভিযোগ দেন আইনি সহায়তার জন্য। ওয়াসিমের মা পেমালা বেগম বলেন, গ্রামের মিলন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ১০ টাকা দিয়ে এক বছর আগে ওয়াসিমকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। লিবিয়ায় গিয়ে ওয়াসিমকে একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে যোগ দেন। ৩ মাস পর ওয়াসিমের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন তাকে জানায়, তারা ওয়াসিমকে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাবে। সেখানে ভালো কাজ ও টাকা আছে। ইসমাইল অনেকদিন ধরেই লিবিয়ায় আছে। ইতালির পথে রওয়ানা হওয়ার আগে ওয়াসিম তার মাকে ফোন করে জানিয়েছিল তারা ইতালির পথে যাবে একদিন পর। এরপর ১৫ দিন যোগাযোগ ছিল না মায়ের সঙ্গে। এদিকে ইতালি রওয়ানা হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর ওয়াসিম তার মায়ের কাছে মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করেন। ওয়াসিম মাকে জানান, অপহরণকারীরা তাকে জিম্মি করে রেখেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওয়াসিম বলেন, মা তোমরা আমাকে বাঁচাও। এখানে প্রতিদিন আমাকে নির্যাতন করা হয়। এরা আমাকে মেরে ফেলবে। পেমালা বেগম জানান, প্রায় ৬ মাস হলো আমার ছেলেকে অপহরণের পর জিম্মি করে রাখা হয়েছে লিবিয়ায়। অপহরণ চক্রের সঙ্গে ইসমাইল জড়িত রয়েছে। চক্রের সদস্যদের ইতোমধ্যে দুই দফায় ৮ লাখ পরিশোধ করেছি; কিন্তু ২০ লাখ টাকা না পেলে আমার ছেলেকে মুক্তি দেবে না বলে জানিয়েছে তারা। ছেলেকে মুক্ত করতে ইসমাইলের মা-বাবার হাত-পা ধরে বহু কান্নকাটি করেছি, কোনো কাজ হয়নি। জিম্মি ওয়াসিমের মামা আব্দুল জলিল বলেন, অপহরণকারী দলের সঙ্গে ওয়াসিমের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন জড়িত আছে বলে আমরা মনে করছি। ওয়াসিমকে মুক্ত করতে আমরা দুবারে তার পরিবারের কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আরও টাকা দাবি করছে অপহরণকারীরা। এ কারণে ওয়াসিমকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। পেমালা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ছেলেকে উদ্ধারে আমরা দুর্গাপুর থানায় কয়েকবার গিয়েছি। পুলিশ বলেছে, দেশের বাইরের ঘটনা। এসব কারণ দেখিয়ে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসমাইল হোসেনের পরিবারকে চাপ দিলেই ওয়াসিমকে লিবিয়া থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওয়াসিমের মা ও মামার দাবি, ইসমাইলের পরিবারকে যদি পুলিশ চাপ দেয়, তাহলে ওয়াসিম মুক্তি পাবে বলে তাদের বিশ্বাস। জানতে চাইলে রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসিমকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ায়। এ কারণে থানায় অভিযোগ নেওয়া যায়নি। ওয়াসিমকে মুক্ত করতে পররাষ্ট্র অথবা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে পারে।