মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলের মাটি কেটে দেদারছে বিক্রি করছে মাটি খেকোরা।
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়াল বিল প্রমত্তা পদ্মানদী ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর, সিরাদিখান ও ঢাকার জেলার নবাবগঞ্জ এবং দোহার উপজেলার অন্তর্গত একটি অবভূমি। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন এই আড়িয়াল বিল। আড়িয়াল বিলের বেশিরভাগ এলাকাই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র থাকে এবং বিলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সঞ্চিত থাকে। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও শীতকালে এটি বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়। এই বিলে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করা হয়, বিলের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে,বর্ষাকালে পানি থৈ থৈ পালতোলা নৌকা চলাচল, শীতকালে বিলের উপরিভাগ অঞ্চলের মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের অবাক সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির মিষ্টিকুমড়া। দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেনীর মাটি খেকোরা আড়িয়াল বিল দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট বড় বেশ কয়েকটি খাল ও কৃষি জমির মাটি ভেক্যু দিয়ে কেটে ট্রলার ও মাহিন্দ্র যোগে বিভিন্ন জেলার ইট ভাটায় বিক্রি করে যাচ্ছে। অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা খালের পাড়ের মাটি ও আড়িয়াল বিলের কৃষি জমির পলিযুক্ত উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করায় এবং বিলগামী কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করা রাস্তা দিয়ে মাটি ভর্তি মাহিন্দ্র চলাচলে ঐ সব রাস্তা ধেবে গিয়ে এবং খালেরপাড় না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে চলাচল করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে কয়েক ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক। এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন ব্যবস্থা না গ্রহন করায় দিনদিন বেড়েই চলছে মাটি বিক্রি।আজ সোমবার সরেজমিনে উপজেলার হাসাড়া ও বাড়ৈখালী ইউনিয়নের আড়িয়াল বিলের অংশ ঘুরে দেখা যায়, আড়িয়াল বিলে কয়েকটি খাল রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগর আলমপুর খাল, আলমপুর সোনারগাও গ্রাম হতে মদনখালী খাল পর্যন্ত বড় খাল, লস্করপুর পুটিমারা থেকে মদনখালী পর্যন্ত খাল,গাদিঘাট থেকে বড় খাল পর্যন্ত খালসহ বেশ কয়েকটি ছোট বড়খাল রয়েছে। গত ৩ বছর পূর্বে বিলের উত্তর পশ্চিম অংশে থাকা বড় খালটি জাইকার ১কোটি ৭২ লক্ষ টাকা অর্থায়নে মদনখালী-আলমপুর বাপস সমিতির মাধ্যমে পূনঃ খনন কাজ সম্পূন্ন করা হয়। যদিও ঐ সময় খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের তুলেন আড়িয়াল বিলের অনেক কৃষক। কিন্তু ঐ অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি আদৌ। খাল পূনঃ খনন শেষ হওয়ার সাথে সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা খালের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খালের দুই পাড় ও বিলগামী রাস্তা গুলো।প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা শতাধিক বড় বড় ট্রলার যোগে প্রতি ট্রলার ১০-১২ হাজার টাকা মুল্যে এসব মাটি বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে আর্থিক লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা আর ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছেন নিরীহ হাজার হাজার কৃষকরা।আড়িয়াল বিলের মাটি কেটে বিক্রি করা একটি বড় সেন্ডিকেট রয়েছে। সেন্ডিকেটের সদস্যরা যার যে অঞ্চল সে অঞ্চলের খাল পাড় ও কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে থাকেন। বাড়ৈখালী ইউনিয়নের মদন খালী গ্রামের শিপন, যুবলীগ নেতা সাঠিন, চঞ্চল, বাড়ৈখালী গ্রামের তাসু দেওয়ান, ভাগিনা ফয়সাল, মাইকেল, মমিনুল,আলমগীর, হাসাড়া ইউনিয়নের আলমপুর এলাকার শামীম দীর্ঘদিন এর বিলে মাটি কেটে বিক্রি করে আসছেন।এব্যাপারে বাড়ৈখালী আলমপুর বাপস সমিতির সভাপতি আসলাম জানান, খালের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি আড়িয়াল বিলের খাল পাড়ে যাই এবং গিয়ে দেখি খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করায় পাড় দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। পরে আমি খালের পাড় রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করি।এ বিষয়ে বাড়ৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন মাস্টার বলেন, আমি আড়িয়াল বিলের মাটি বন্ধ করার জন্য উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংসহ বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আদৌ এই বিলের মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।মাটি কাটা বন্ধে বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ফারুক হোসেন বলেন, গত ৩ বছর পূর্বে প্রায় পৌণে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়িয়ালের বিলের বড় খাল পুনঃ খনন করা হয়েছে। এর পর থেকেই খালের দুই পাড়ের বেশীর ভাগ মাটিই কেটে নিয়ে বিক্রি করে কৃষকের ক্ষতি করছে। কারা মাটি কেটে বিক্রি করছে সেটা আপনারাও জানেন আমিও জানি আমি কারো নাম বলতে চাই না। এব্যাপারে আমি প্রতিবারই উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেছি এমনকি লিখিত আকারে বলেছি। কিন্তু আদৌ বিলের মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না।বাড়ৈখালী ইউনিয়ন সহকারী তহসিলদার মাহফুজ আহম্মেদ বলেন, এই ব্যাপারে আমি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে পারবো না।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এই বিষয়ে এসিল্যান্ড সাহেবকে বলা রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।