মুন্সীগঞ্জের আলু চাষীদের দুর্ভোগ।


মুন্সীগঞ্জের আলু চাষীদের দুর্ভোগ যেন কিছুতেই  কমছে না। এ বছর দুই দফা বৃষ্টিতে আলু চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে যখন কৃষক উচ্চ দামে বীজ আলু কিনে জমিতে আলু রোপন করেছেন সেই বীজ ঠিকমতো গজায়নি। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো দেখা মিলছে না সূর্যের । ঘন কুয়াশায় রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়েছে আলু জমিতে। কৃষক ব্যাপকভাবে জমিতে ঔষধ স্প্রে করছেন। এরপর চলছে ইঁদুরের উপদ্রব। সব মিলিয়ে আলু চাষ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। আলু চাষে বেড়েই চলেছে ব্যায়।আজ মঙ্গলবার সরজমিনে  মুন্সীগঞ্জের আলু জমিগুলো ঘুরে দেখা গেছে জমি পরিচর্যায়  মুন্সীগঞ্জের কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।অন্যান্য বৎসর এ সময়ে মুন্সীগঞ্জের পুরো আলু জমিগুলো জুড়ে আলু গাছ থাকলেও এ বছর দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জমির মধ্যেই স্থানে স্থানে রয়েছে আলু গাছ আবার স্থানে স্থানে ফাঁকা গজায়নি কোন গাছ। আলু রোপন মৌসুমে ঘুর্ণিঝড় মিথিলি ও মিগজাউমের প্রভাবে দু-দফা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এই সমস্ত আলু জমিগুলো।একদিকে বৃষ্টির পানি জমে অনেকে জমির রোপন করা আলু বীজ স্থানে স্থানে পঁচে যাওয়ায় গাছ জন্মায়নি আবাদি অনেক জমিতে। অন্যদিকে কৃষক যে মুহূর্তে হিমাগার হতে বীজগুলো বাড়িতে এনে রেখে তারপরে জমিতে আলু চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন সেই সময় বৃষ্টিতে জমিগুলো তলিয়ে  যাওয়ায় দীর্ঘদিন বীজগুলো বাড়িতে রেখে তারপর জমি শুকানোর পর পূনরায় ওই সমস্ত বাড়িতে রাখা বীজ বপন করতে ১ মাসেরও অধিক সময় লেগে যাওযায় ঠিকমতো গাছ গজায়নি বলে দাবি কৃষকদের।এর আগে এ বছর আলু চাষ করতে গিয়ে  মুন্সীগঞ্জের কৃষক দুদফা বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একদিকে আলু বীজ পঁচে নষ্ট হয় অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের কারণে আলু চাষ এক মাসের অধিক সময় বিলম্ব হয়। আলু চাষের জন্য নভেম্বর মাস উত্তম সময় হলেও এ বছর জানুয়ারি মাসের অর্ধেক পর্যন্ত জমিতে আলু চাষ করতে দেখা গেছে কৃষকদের।  ঘুর্ণিঝড় মিগজাউমের  পরে  ঘন কুয়াসা আর শিশিরের কারনে রাতের বেলা জমিগুলো ভিজে থাকায় নতুন করে চাষাবাদে বিরম্বণায় পরেন কৃষক। গত প্রায় ২০ দিন যাবত দিনের অর্ধেক সময় আকাশে সূর্য কিরন না থাকায় বৃষ্টির পানিতে তালিয়ে থাকা জমিগুলো শুকাতে দেরি হচ্ছিল ।  ফলে এ বছর অনেক নিচু জমিতে আলু আবাদ করা সম্ভব হয়নি । এছাড়া এ বছর বৃষ্টিতে বীজ তলিয়ে পচেঁ যাওয়ায় বীজ সংকট চরম আকার ধারন করে। খাবরের জন্য বিক্রি করতে হিমাগারে রাখা আলুকে  বীজ হিসাবে ব্যবহার করে কৃষক। খাবারের জন্য রাখা আলুকে ৭০/৮০ টাকা কেজি হিসাবে কিনে বীজ আলু হিসাবে ব্যবহার করে কৃষক। কিন্তু সেই বীজ ঠিকমত না গজানোর কারণে কৃষকদের আলু জমিগুলো এখন স্থানে স্থানে ফাঁকা হয়ে রয়েছে। এতে আলুর উৎপাদন অনেক কম হওয়ার সংঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বছর ঘুর্নিঝড় মিথিলির প্রভাবে উচু জমিতে রোপন করা আলুর কিছুটা ক্ষতি হলেও মিগজাউমের প্রভাবে রোপন করা আলুর ব্যাপক ক্ষতির সন্মুখিন হয় কৃষক। সে সময় কৃষক মুন্সীগঞ্জের প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু রোপন করে ফেলেছিল আর বাকি অধেক আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করে ফেলেছিল।মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এ বছর জেলায়  মোট ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে।এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী এলাকার চাষি ইয়াকুব খান বলেন, হল্যান্ড হতে আমদানি করা আলু বিজ ৫০ কেজি ১২হাজার টাকা মূলে কিনে জমিতে লাগাইছিলাম। সেই বীজ স্থানে স্থানে গজাইছে আবার অনেক স্থানে গাজাইয়নি। এখোন আবার পরছে ঘন কুয়াসা । এবার আলু চাষ করে আমাদের দূর্ভোগের আর শেষ নেই। এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বলই গ্রামের চাষি রুবেল খান বলেন,  জমিতে ঠিকমতো বীজ গজায়নি। তার উপরে ইদুরের উপদ্রুব চলছে। আমার জমির বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে ইদুর আলু বীজ খেয়ে ফেলছে।অপর কৃষক সবুর মিয়া বলেন, দুইবার বৃষ্টিতে আমাদের বীজ নষ্ট হয়েছে। যে সময় আমরা হিমাগার হতে আলু বাড়িতে এনে রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম সেই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় দির্ঘদিন বীজগুলো বাড়িতে রেখে দিয়েছিলাম সেই কারনে হয়তো আমাদের রোপন করা আলু বীজগুলো ঠিকমতো গজায়নি। এখোন আবার ঘন কুয়াসা পরছে তাই ঔসুধ স্প্রে করছি। এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন,  এ বছর শেষ প্রযন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ৯ হেক্টর বেশি জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর আলু আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর। আলু বীজ পচেঁ যাওয়ার বিষয়ে বলেন কৃষক দির্ঘদিন বীজ আলু বাড়িতে এনে রাখায় হয়তোবা এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বর্তমানে ঘন কুয়াসা পরছে অন্যদিকে দিনে তাপমাত্রা বেশি রাতে কম হওয়ায় রোগবালাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো সেভাবে রোগবালাই ছড়িয়ে পরেনি আমার নিয়মিত ঔষধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি চাষিদের।