মুন্সীগঞ্জে হাজার বছরের পুরানো হিজল গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।


মুন্সীগঞ্জে শত শত বছরের পুরোনো বেশ কিছু হিজল গাছ দিয়ে ঘেরা একটি  স্থানটির নাম বার আউলিয়া তলা। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের দশত্তর গ্রামের ঘণ হিজল গাছে ঘেরা পরিত্যাক্ত ভিটাটি হিজল গাছ বুকে নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত শত বছর ধরে।এই বারো আউলিয়াতলার আয়তন মাত্র ৫ শতকের মতো। এই ৫ শতক জমিতে রয়েছে বেশ বড় বড়  কিছু হিজল গাজ। এছাড়া রয়েছে একটি কড়ই গাছও। এস্থানে যে গাছগুলো রয়েছে সব মিলিয়ে ৩৫/৪০টি গাছ হবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো কথিত আছে এই গাছগুলো গুনে কখনো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়না এখানে কয়টি গাছ রয়েছে।সাধারনত হিজল গাছ হতে গাছের দানা পরে পাশের স্থানে হিজল গাছের চারা জন্মায়। তবে ওই স্থানের গাছ হতে অসংখ্য দানা পরলেও ওই স্থানে নতুন করে অন্যকোন হিজল গাছ জন্মায়না বলে জানালেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ওই স্থানে যে গাছগুলো রয়েছে সেই গাছগুলো সব বেশ পুরাতন। নতুন কোন ছোট বা চারাগাছ ওই বারো আউলিয়াতলার আশেপাশে নেই।এলাকার প্রবীন এবং নবিন কতিপয় ব্যাক্তি জানান, জন্মের পর আমরা এইস্থাটি এমনি দেখছেন তারা। তদের বাব দাদাদের মুখেও শুনেছেন তারাও এইস্থানটি এমনি দেখেছে। বিভিন্ন স্কুল হতে ছাত্র/ছাত্রী এনে একটি গাছের গোড়ায় একজনকে করে দাড় করিয়ে এই গাছগুলো বার বার গুনেও নির্ধারণ করা যায়নি এখানে কয়টি গাছ রয়েছে। একবার গুনলে যদি হয় চল্লিশটি পরের বার গুনলে হয়ে যাচ্ছে ৪১টি।ওই স্থানটিকে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায় পবিত্রস্থান বলে মনে করে। মুসলমানরা ওখানে বাৎসরিক ওরস মোবারক পালন করে। হিন্দুরা গাছগুলোতে তৈল সিন্দুর দেয়।শত শত কিংবা হাজার বছরেরও প্রাচীন এই বারো আউলিয়াতলা। বারো আউলিয়াতলা কীভাবে এই নাম হলো, তা কেউ বলতে পারে না। এই দশত্তর গ্রামের সামান্য দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা পদ্মা নদী। দশত্তর গ্রামের দশত্তর মৌজায় একটি বিশেষ স্থানের নাম হলো এই “বারো আউলিয়াতলা। ”এলাকাবসি জানান, এই জমির মালিক সুধীর বেপারী ও মনমোহন বেপারী তবে কেউ কেউ জানলেন এটি একটি সরকারি খাস সম্পত্তি।  এখানে হিন্দুরা প্রতিটি হিজল গাছে তেলসিদুর মেখে রাখে। গাছগুলোর পূজা করে। মুসলমানরা মানত করে। বার্ষরিক দোয় মাহফিল করে।ওই  দশত্তর গ্রামের বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, বার আউলিয়াতলা মানে একটি অনেক পুরাতন স্থান। বলতে পারেনা। এ স্থানে নামকরণ কিভাবে হয়েছে এলাকার কেউ বলতে পারেনা । এই স্থানের হিজল গাছগুলো আমরা গুনেছি কিন্তু এখানে মোট কয়টি গাছ আছে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না । পরে এলাকার প্রবীণ লোক যারা আছে তারা বলেছে এগুলি আর গুনা দরকার নাই তাই এখন আমরা অনেকেই এগুলো আর গননা করিনা। তবে আচার্যের বিষয় হচ্ছে এখানে যে গাছগুলো আছে তা সবই পুরাতন। এই গাছ হতে গোটা পড়ে এখানে নতুন গাছ জন্মায় না আর জন্মালেও বেশি দিন বাঁচে না ।ওই স্থানের পাশের বাইনকাইচ গ্রামের বাসিন্দা শহিদ মিয়া বলেন, জন্মের পর হতে স্থানটি এমনিই দেখছি। আমি যখন কলমা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরি তখন আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের বেশ কয়েকজন ছাত্র নিয়ে এগাছগুলো গুনার জন্য এসেছিলেন। আমাদের একেকজন ছাত্রকে একেকটি গাছের গোড়ায় দাড় করিয়ে গুনেও নির্ধারণ করতে পারেননি এখানে কয়টি গাছ আছে।ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আ. জব্বার হালদার বলেন, আমার বাবা ৯০ বছর বয়স পাইছে জন্মের পর হতে সে এই স্থানটি এমনি দেখছে। এই সীমানার মধ্যে গাছ থেকে পরে কোন গাছের গোডা জন্মায়না । দূরে গিয়ে গজায়। এগাছগুলো কেউ মিলাতে পারেনা এখানে কয়টা গাছ রয়েছে।  মাঝে মাঝে রাতের বেলায় অন্যস্থানে বাতাস না থাকলেও এখানে বাতাস দেখা যায়। আমরা প্রতিবছর এখানে খোদাই শিন্নি (বাৎসরিক ওরস) করি। এই জমি দির্ঘদিন যাবৎ এভাবেই পরে রয়েছে কেউ ভোগদখল করতে পারেনা। একটা গাছের ডালা কেউ কাটতে ভাঙ্গতে পারেনা কাটলে স্বপ্নে অনেক কিছু দেখায়।ইতিহাস গভেষনাকারী শেখ রাসেল ফখরুদ্দিন বলেন, আমি আমার গবেষনায় এবং প্রাচিন একটি মসজিদ সম্পর্কে বইয়ে জানতে পেরেছে পূর্বে যারা এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করিতে এসেছিলেন তারা ১২ জন করে একটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ইসলাম প্রচার করিতেন। এই ১২ জন ইসলাম প্রচারক যেস্থানে বসতি স্থাপন করিতেন কিংবা অবস্থান করিতেন এ রকম অনেক স্থানের নামই পরবর্তীতে বারো আউলিয়াতলা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও শ্রীনগর উপজেলাসহ বাংলাদেশের অনেকস্থানে বারো আউলিয়াতলা নামে স্থান রয়েছে। তবে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বারো আউলিয়াতলা নামের যে স্থানটি রয়েছে সুনিদিষ্ট কোন ইতিহাস আমি অনেক গবেষনা করেও পাইনি।অপর ইতিহাস গবেষক সাংবাদিক গোলাম আশরাফ উজ্জ্বল বলেন, খুব সম্ভবত হাজার বছর আগে মুন্সীগঞ্জ সদরের কেওয়ার গ্রামের শয়িত বারো আউলিয়াগণ এখানে এসেছিলেন। সেই থেকে এই এলাকাটি বারো আউলিয়াতলা হয়েছে। বারো আউলিয়াতলার পাশের পাঁচগাঁও গ্রামে যে সাতুল্লা দীঘি রয়েছে তাও আউলিয়াদের নামের সাথে জড়িত। সাত আউলিয়া থেকে শব্দটির উৎপত্তি সাতুল্লা।মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা থেকে পাঁচগাঁও বাজার ৭ কিলোমিটার দুরত্ব। পাঁচগাঁও বাজার থেকে সোজা ১ কিলোমিটার পশ্চিমে এই কিংবদন্তি বারো আউলিয়াতলা।