বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাবে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিশোরীরা


দেশের চার সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যালয়গামী ৮ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সেবায় প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত। বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুমের অভাবে কিশোরীরা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। \'রিসার্চ ফাইন্ডিংস অন পলিসি এনালাইসিস ফর সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ সার্ভিস অ্যান্ড রাইটস অব আরবান পিপল ইন বাংলাদেশ\' গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা শহরে ১০ থেকে ১৯ বছরের মেয়েরা স্কুল ও কোচিংসহ ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা বাড়ির বাইরে থাকে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা না থাকা, অপরিষ্কার টয়লেট, ছাত্রীর তুলনায় টয়লেটের সংখ্যা কম ইত্যাদি কারণে ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের টয়লেট ব্যবহার না করে একেবারে বাড়ি ফিরে টয়লেটে যায়। দীর্ঘক্ষণ টয়লেট ব্যবহার না করায় তারা নানা জটিলতায় ভোগে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আরবান প্রোগ্রামের আয়োজনে সোমবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে \'নগরীর কিশোর-কিশোরী ও মায়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক\' একাত্তরের বিশেষ নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আরবান প্রোগ্রাম ঢাকা, টঙ্গী (গাজীপুরের অধীনে) এবং চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের বিশেষ উদ্যোগ (একটি নিরাপদ শহর ও স্বাস্থ্যকর শহর প্রতিষ্ঠা) বাস্তবায়ন করছে। হেলদি সিটি ইনিশিয়েটিভস-এর অধীনে, জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিষেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা শহুরে দরিদ্রদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা, শহরে দরিদ্র বা এমভিসি, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকায় কিশোরী মেয়েদের জন্য জনস্বাস্থ্য পরিষেবার প্রবেশগম্যতা তৈরি এবং সরকারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করবে। সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য জনস্বাস্থ্য নীতি ও আইন সংশোধন, সংস্কার, ও নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি জোর দাবি জানায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে স্যানিটারি প্যাড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ এমপি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের সমস্যা নিরসনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের মনিটরিং এর সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যতটুকু সুযোগ সুবিধা রয়েছে তার কতটুকু ব্যবহার হচ্ছে এটা যাচাই করে দেখতে হবে। আবিদা সুলতানা ও খাদিজা রহমান দুই কিশোরী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মাসিককালীন সময়ে কিশোরীরা ফার্মেসীতে স্যানিটারি প্যাড কিনতে যেতে না পারায় কাপড় ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাজারে যে নিত্যনতুন প্যাড বের হচ্ছে এর দামে ভিন্নতা রয়েছে। এর কারণে তা অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল জানান, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি অধ্যায় রয়েছে। শিক্ষকরা এই অধ্যায়টি শিক্ষার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যভাবে পড়ান না। শিক্ষার্থীদের পড়ে নিতে বলেন। কিন্তু তারা পড়ালে পিরিয়ডকালীন সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীরা জানতে পারত। এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম সাহিফুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিইও মো. সেলিম রেজা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর এর পরিচালক আব্দুল লতিফ মোল্লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ওয়ার্ল্ড ভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর অপারেশন্স চন্দন জেড গোমেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গাইনোকোলজি এন্ড অবস্ট্রেট্রিস এর অধ্যাপক মুনা শালিমা জাহান, এনআইসিভিড’র পেড্রিয়াটিক কার্ডিওলজি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার প্রমুখ।