চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যায়


চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যায়, যা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কেননা কম সরকারি বরাদ্দ এবং যা বরাদ্দ হয় সেটিরও কার্যকর ব্যয় না হওয়ায় মানুষের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে বছরে মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে গিয়ে ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে ডায়াগনস্টিকের জন্য ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, কনসালটেশনের জন্য ১০ দশমিক ৩১ এবং পরিবহণের জন্য খরচ হয় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, আমি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করবো, কেননা এটা আমরা জন্য চ্যালেঞ্জ। এই আইনের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক সব পক্ষকে সুরক্ষা দেওয়াটা আমরা দায়িত্ব। সেই সঙ্গে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড.বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার। প্রধান অতিাথির বক্তব্যে সামন্ত লাল সেন বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা অনেক। সব রাতারাতি শেষ হবে না। তবে আমি চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সবার সহায়তা লাগবে। মানুষের পকেট থেকে যাতে অধিক অর্থ স্বাস্থ্য খাতে চলে যায় সেজন্য আমি হেলথ ইন্স্যুরেন্স করব। এজন্য ভারতের মোদি কেয়ারের মতো কিছু করা যায় কিনা সেটি ভাবা হচ্ছে। তবে একটু সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, আমি মন্ত্রী হবো তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু যখন দায়িত্ব পেয়েছি তখন স্বাস্থ্য খাতের অনেক বিষয় নিয়েই জানতে হচ্ছে। তবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে ঢাকায় বসে যতই লেকচার দেই লাভ হবে না। এজন্য গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আগে কাজ করছি। অবৈধ ফার্মেসী দমন করতে ড্রাগের মহাপরিচালককে শক্ত ভূমিকা নিতে বলেন তিনি। গবেষণাপত্রে ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, ১৯৯৭ সালে চিকিৎসার পেছনে মানুষের পকেট থেকে চলে যেত ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৬৮ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২১ সালের হিসেবে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিন্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০, ভারতে ৪৯ দশমিক ৮০, শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম খরচ হয় মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তির পকেট থেকে যে অর্থ ব্যয় হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে যায় ক্যান্সারের পেছনে। এতে ব্যয় হয় গড়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। এছাড়া কোভিডের সময় খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৭০৯ টাকা। হার্টের অসুখের জন্য ৯৯ হাজার ৭১৫ টাকা, লিভার অসুখের জন্য ৭৮ হাজার ৯৪৩ টাকা এবং জন্ডিসে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। সবচেয়ে কম খরচ হয় জ্বরের কারণে। তিনি বলেন, একজন রোগী হাসপাতালে গেলে মানুষের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে, এরপর অপারেশনে ২৩ শতাংশ, ডায়াগনস্টিকে ১৭ শতাংশ, বেড চার্জ বাবদ ১৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ১৪ শতাংশ। মানুষ ওষুধ কিনতে যে মোট ব্যয় করে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করে ফার্মেসিতে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় করতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হেলথ ইন্স্যুরেন্স করা প্রয়োজন। ড. বিনায়ক সেন আরও বলেন, গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। কিন্তু শহরেও এরকম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা দরকার। যাতে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারে কম খরচে। চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ কম পক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে শুধু বরাদ্দই নয় এর কার্যকর ব্যয়ও নিশ্চিত করতে হবে।