রমজানে নফল ইবাদতের গুরুত্ব
অনলাইন নিউজ ডেক্স
কর্তব্যের অতিরিক্ত কাজই নফল। শরিয়তে ফরজ ও ওয়াজিবের অতিরিক্ত ইবাদতকে নফল বলে। তবে নফল ইবাদত ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবে গণ্য। কেননা ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতে কোনো ঘাটতি হলে নফল ইবাদত সেই ঘাটতি পূরণ করে দেয়।
সুতরাং ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবে নফল ইবাদতের গুরুত্ব আছে। আর রমজান মাসে নফল ইবাদতের গুরুত্ব আরো অনেক বেশি। কেননা রমজানে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব দেয়া হয়। আর রমজানের প্রতিটি নফল ইবাদত মর্যাদা ও সওয়াবের দিক দিয়ে ফরজের পর্যায়ভুক্ত।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। শোয়াবুল ইমান ৩/৩০৫
রমজান মাসে পুণ্যের খাতা ভারী করার জন্য খুব সহজেই যেসব নফল আমল করা যায় তা হলো— প্রতিদিন বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা, দান-খয়রাত করা, সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা, দরূদ শরিফ পড়া, সালামের প্রচার-প্রসার করা, অধীনস্তদের ভার-বোঝা কমানো, অসহায়কে সহযোগিতা করা, আর্তপীড়িতের সেবা করা, রোগীর খোঁজখবর রাখা, মানুষের সঙ্গে হাসি মুখে কুশলাদি বিনিময় করা, সর্বোপরি সকলের সঙ্গে সদাচরণ করা।
ফরজ ইবাদতসমূহ পালন করা বান্দার আবশ্যিক কর্তব্য। এর জন্য বান্দাকে পরকালে হিসাব দিতে হবে। আর নফল ইবাদত হলো আবশ্যিক কর্তব্যের অতিরিক্ত। নফল আদায় না করলে কোনো হিসাব দিতে হবে না। কেননা নফল আদায় করতে বান্দা বাধ্য নয়। তবে নফল আদায় করলে তা বান্দার পক্ষ থেকে মহান আল্লাহর জন্য উপহার হিসেবে গণ্য হবে। এতে বান্দা মহান আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হতে পারবে। এটা বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রকাশ। আর এতে মহান আল্লাহও বান্দাকে ভালোবেসে চাহিবামাত্র সবকিছু দান করেন।
রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, শুধু তা দ্বারাই কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। বরং আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি একপর্যায়ে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। (এমতাবস্থায়) সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে অবশ্যই তাকে তা দান করি। বুখারি ৬০৫৮
গুরুত্ব ও মহত্বের দিক দিয়ে নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে নফল নামাজের স্থান সর্বাগ্রে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক সাহাবি রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করবে (নফল নামাজ পড়বে)। কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন। সহিহ মুসলিম ১৩৫৩
নামাজ ও রোজা সকলের জন্য আর হজ ও জাকাত সমার্থ্যবানদের জন্য আদায় করা ফরজ বা আবশ্যিক কর্তব্য। এই ইবাদতগুলো আবার নফল হিসেবেও অতিরিক্তভাবে আদায় করা যায়। পরকালে এসব ফরজ ইবাদতের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব মহান আল্লাহর কাছে দিতে হবে। সেদিন অনেকের ফরজ ইবাদতে ত্রুটি ও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন ফরজ ইবাদতে কোনো ঘাটতি হলে নফল ইবাদত থেকে সেই ঘাটতি পূরণ করা হবে।
ইবাদতসমূহের মধ্যে নামাজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধনী-গরীব সকলেরই প্রতিদিন পাঁচবার ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। ইবাদতসমূহের মধ্যে যেহেতু একজন মুসলমানের নামাজ সবচেয়ে বেশিবার আদায় করতে হয় তাই এই ইবাদতে ঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের বিকল্প নেই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সে সঠিক হিসাব দিতে পারে তবে কৃতকার্য হয়ে যাবে। আর যদি ব্যর্থ হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরজগুলোর মধ্যে কোনো ঘাটতি থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আছে কিনা? যদি থাকে তবে তা দিয়ে তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর একইভাবে তার অন্যান্য আমলের হিসাব নেওয়া হবে। সুনানে তিরমিজি ৩৩৭
সারজীবনে পালনীয় ইবাদত হিসাবে ফরজ নামাজ সবচেয়ে বেশি আদায় করতে হয়। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফরজ নামাজে ত্রুটি ও ঘাটতি হয়ে যেতে পারে। এই ঘাটতি যদি পূরণ করা না যায় তাহলে পরকালে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। রমজান মাসের নফল নামাজ শক্তির দিক দিয়ে ফরজ নামাজের মর্যাদাভুক্ত। তাই সারা জীবনের ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ এবং মহান আল্লাহর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনে রমজানে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।