রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পক্ষের দাবিতে মিছিল


অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি-দাওয়ার যেন শেষ নেই। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জানানো হচ্ছে নানা ধরনের দাবি। দাবি দাওয়া নিয়ে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতর ও বাইরে ঘেরাও, অবস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দাবি আদায়ের কর্মসূচি ছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কেও। এতে ওইসব সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল নয় দফা দাবিতে জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তর ঘেরাও করেন সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আর সচিবালয়ের তিনটি গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন গ্রাম পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের ইউনিয়ন কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা। বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনিয়মিত শিল্পীরা মানবন্ধন করেছেন। মিরপুরে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগ ও অনিয়মের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য অবসানের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকস। জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তর ঘেরাও: পদনাম পরিবর্তন, টিপটপ ভাতা প্রদান এবং ব্লকড পদে পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তর ঘেরাও করেছে। পদোন্নতির দাবিতে তাদেরকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এদিকে বিসিএস ১৩তম থেকে ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন। ওই স্মারক লিপিতে তারা ২০০২ সালের প্রণীত সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালার বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি করেন। এই মূহুর্তে ১৯৪ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন বলে তারা জানান। বিধিমালায় অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং (অন্য ২৫টি ক্যাডার) আদার্স ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছে। অনুরূপভাবে যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিবও একইভাবে পদোন্নতি পাচ্ছে। তারা মেধারভিত্তিতে পদোন্নতিতে সমতা নিশ্চিত করার দাবি জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী কর্মচারি নেতাদের ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান। তিনি বলেন, বিষয়গুলো সংশোধন ও পরিবর্তনে কাজ চলছে। কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) পদনাম পরিবর্তন করে উপ-সহকারী সচিব করতে হবে। সাঁট মুদ্রাক্ষরিক নাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদনাম পরিবর্তন করে অতিরিক্ত উপ-সকারী সচিব করতে হবে। উপ-সহকারী সচিব পদকে ৯ম গ্রেড দিতে হবে। ১০ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত আগের নিয়মের আলোকে ৪ বছর পর সিলেকশন গ্রেড, ৮ বছর চাকরি শেষে প্রথম টাইম স্কেল, ১২ বছর চাকরি শেষে দ্বিতীয় টাইম স্কেল এবং ১৫ বছর চাকরি শেষে তৃতীয় টাইম স্কেল দিতে হবে। অবিলম্বে মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে। প্রশাসনে বিদ্যমান ২০ গ্রেড কমিয়ে ১২টিতে আনতে হবে। অবিলম্বে নবম পে-কমিশন বাস্তবায়ন করতে হবে। ১৯৫৯ সালের পেনশন আইন হালনাগাদ করতে হবে। বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিল্পীদের মানববন্ধন: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেতার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী, নিজস্ব শিল্পী, অনিয়মিত শিল্পী এবং কলাকুশলীন্দরা। তারা বিভিন্ন ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ডে বৈষম্য নিরসনে তাদের দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চনার অবসান করা, একীভূত বিসিএস (তথ্য) ক্যাডার বাস্তবায়ন করা, বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তা থেকে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি পুনঃসংশোধন করা ইত্যাদি। সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি: গ্রাম পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তর ইউনিয়ন কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে বিপুল সংখ্যক মানুষ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাদের এ কর্মসূচির কারণে সচিবালয়ের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার তিনটি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আগতরা। গেট বন্ধ করে দেওয়ায় অফিস শেষে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকে বের হতে পারেননি। একটি গেট খোলা থাকায় সেখানে তৈরি হয় জটলা। মৎস্য অধিদপ্তরের ইউনিয়ন কর্মচারী কল্যাণ পরিষদে কর্মকর্তারা বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে ‘ইউনিয়ন প্রকল্প’র জনবল রাজস্ব বাজেটের আওতায় আনার দাবি নিয়ে এসেছি। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হলে আমাদের সমস্যা কেটে যাবে। সেজন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি। অপরদিকে গ্রাম পুলিশের দাবির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী গ্রাম পুলিশ সংগঠনের সভাপতি লাল মিয়া বলেন, আমরা ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ রয়েছি। ২০০৯ সালে জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট হওয়া সত্ত্বেও ওই অনুযায়ী আমরা বেতন পাচ্ছি না। তাই আমরা এই বেতন বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি। তিনি বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালনা করা এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য অবসানের দাববি: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বৈষম্যের অবসান দাবি করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকস (বিএসপিইউএ)। সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বিএসপিইউএ সভাপতি প্রফেসর ডঃ ফরিদ আহমদ সোবহানী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ উচ্চশিক্ষায় অবদান রাখছে। অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে- যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহার করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ, চাকুরির ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী গ্রাজুয়েটদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পিএইচডি\'তে ভর্তির সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসপিইউএ সাধারণ সম্পাদক ডঃ নাহিন মামুন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডঃ আবদুল্লাহ আল-মামুন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএসপিইউএ ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক) প্রফেসর ডঃ আখতার হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন) প্রফেসর ডঃ মামুন হাবীব, অর্থ সম্পাদক প্রফেসর ডঃ জুলফিকুর হাসান, মিডিয়া এন্ড পিআর সম্পাদক রিয়াজ হাফিজ প্রমুখ।